মহাকাশ যুদ্ধের শঙ্কা: মার্কিন উপগ্রহকে অনুসরণ করছে রাশিয়ার মহাকাশযান

পৃথিবীর কক্ষপথ পরিদর্শন করতে থাকা মার্কিন কৃত্রিম উপগ্রহের উপর গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করেছে রাশিয়ান গোয়েন্দা মহাকাশযান কোসমোস-২৫৪২। ঘটনাটিকে অনেকে ‘মহাকাশ যুদ্ধে’ নতুন যুগের সূচনা বলে মনে করছেন, যেখানে কক্ষপথে অস্ত্রধারী উপগ্রহগুলি অন্য দেশের উপগ্রহগুলিকে নিয়ন্ত্রণ বা ধ্বংস করার চেষ্টা করতে পারে।

রাশিয়ান মহাকাশযানটি সম্প্রতি পৃথিবীর কক্ষপথে তার নিজস্ব অবস্থান পরিবর্তন করে মার্কিন গুপ্তচর উপগ্রহ ইউএসএ-২৪৫ এর আরও কাছাকাছি চলে এসেছে বলে জানা গেছে। দুটি স্যাটেলাইটের দূরত্ব বর্তমানে ১৫০-৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে, বিশাল কক্ষপথে এই দূরত্ব খুবই সামান্য।

স্পেস ট্র্যাকারদের বরাতে জানা গেছে, রাশিয়ান ডিভাইসটি স্নোপিংয়ের উপর নির্ভর করে পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা গুপ্তচর কৃত্রিম উপগ্রহগুলিকে নজরদারি করছে। জানুয়ারি থেকে স্যাটেলাইট স্পটাররা গত নভেম্বরে চালু হওয়া রাশিয়ান কোসমোস-২৫৪২ এর আচরণ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছেন।

কোসমোস-২৫৪২ মহাকাশযানটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রিকনাইসান্স অফিসের শ্রেণিবদ্ধ গুপ্তচর স্যাটেলাইটের (ইউএসএ-২৪৫) সঙ্গে একই পথ পরিক্রম করছে। ন্যাশনাল রিকনাইসান্স অফিস হলো মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি শাখা, যারা গুপ্তচর উপগ্রহের বিশাল বহরের দ্বারা নজরদারি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

রাশিয়ান মহাকাশযানের এই অদ্ভুত আচরণ সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানা যাচ্ছে না। তবে আমেরিকা ও মিত্র দেশগুলির জন্য এই ঘটনাটি উদ্বেগজনক, কারণ এর পেছনে গোয়েন্দা প্রতিরোধের (কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স) উদ্দেশ্য আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সিকিউর ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম পরিকল্পনার পরিচালক ব্রায়ান উইডেন এ বিষয়ে বলেন, “কক্ষপথ হতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে- এনআরও উপগ্রহকে রাশিয়ান মহাকাশযান অনুসরণ করছে। কিন্তু কেন এই রাশিয়ান ডিভাইসটি এমন করছে এই প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর হলো- যে কারণে (গোয়েন্দাগিরি করতে) এটি কক্ষপথে রয়েছে।"

তিনি বলেন, এরপরে কী হতে পারে তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে মার্কিন উপগ্রহটির কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছেনা, তবে রাশিয়া দাবি অনুযায়ী কোসমোস-২৫৪২ কেবল পরিদর্শন করার জন্যই তৈরি করা হয়েছে।

কিন্তু উপগ্রহগুলি একে অপরের খুব কাছাকাছি চলে এলে কী কী করা সম্ভব তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ সতর্কবার্তা হিসেবে জানিয়েছে, এক্ষেত্রে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ অন্যটিকে রাসায়নিক স্প্রে বা লেজার রশ্মি ব্যবহার করে ধ্বংস করে দিতে পারে। তবে এ জাতীয় মহাকাশ যুদ্ধ এখনও ঘটেনি, তবে এটি অবশ্যই মার্কিন সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।

তাছাড়া, যখন অন্য দেশের উপগ্রহ খুব কাছাকাছি চলে আসে তখন কী করা উচিত সে সম্পর্কে কোনো প্রোটোকল নেই। ফলে ভুল বোঝাবুঝি থেকে আক্রমণের ঘটনাও ঘটতে পারে।

উল্লেখ্য, উপগ্রহটি উৎক্ষেপণের সময় গত নভেম্বরে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছিল কোসমোস-২৫৪২ এর কাজ হলো অন্য উপগ্রহগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা। এছাড়াও গত ডিসেম্বরে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক কক্ষপথে কোসমোস ২৫৪৩ নামে আরও একটি ছোট উপগ্রহ স্থাপনের জন্য পরীক্ষা চালিয়েছিল। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক তখন বলেছিল, এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য হলো- দেশীয় উপগ্রহের প্রযুক্তিগত অবস্থা মূল্যায়নের কাজ চালিয়ে যাওয়া।

পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থান করছে রাশিয়ায় এমন অনেকগুলি যোগাযোগ উপগ্রহ রয়েছে যেগুলি ক্রেমলিন তথ্য সংগ্রহ করতে, এমনকি অন্যান্য উপগ্রহকে অক্ষম বা ধ্বংস করতে ব্যবহার করতে পারে বলে ধারণা করা হয়। তথ্যসূত্র: দ্যা মেইল, এনডিটিভি, দ্যা ভার্স

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: