করোনায় বৃদ্ধ ও দুরারোগ্যদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন করোনাভাইরাসের কারণে হওয়া রোগের আনুষ্ঠানিক নাম দিয়েছেন কোভিড-১৯। এ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে যারা বৃদ্ধ এবং যাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো দুরারোগ্য ব্যাধি রয়েছে তাদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত নতুন একটি গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় চীনের উহানের দু’টি হাসপাতালে ১৯১ জন রোগীকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, যারা নিশ্চিতভাবে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এই গবেষণাটিতে প্রথমবারের মতো করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহার ও সুস্থ হয়ে ওঠার সঙ্গে অন্যান্য রোগের সম্পর্ক কতটা তা নির্ণয় করা হয়।

চীনের জিনিনতান হাসপাতালের গবেষক ঝিবো লিউ এ বিষয়ে বলেন, ‌বয়স্ক ব্যক্তি, ভর্তির সময় সেপসিসের লক্ষণ, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের মতো দুরারোগ্য রোগ এবং কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের দীর্ঘায়িত ব্যবহার এই রোগীদের মৃত্যুর গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

লিউ বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং দেহে প্রদাহ বেড়ে যায়, যা ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি সহজতর করে। এ সময় প্রদাহের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দীর্ঘতর হয়, ফলে হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্কসহ অন্যান্য অঙ্গগুলির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

গবেষণায় পর্যবেক্ষণে থাকা ১৯১ জন রোগীর মধ্যে ১৩৭ জনকে হাসপাতাল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এবং ৫৪ জন হাসপাতালেই মারা গেছেন। তবে গবেষকরা এটাও বলা বলেছেন যে, যেহেতু গবেষণাটি সীমিত আকারের করা হয়েছে তাই অনুসন্ধানের যে ফলাফল পাওয়া গেছে তাতে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।

গবেষণাতে ভাইরাল শেডিংয়ের বিষয়ে নতুন তথ্যও উঠে এসেছে। যা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, নোভেল করোনাভাইরাসের ভাইরাল শেডিংয়ের গড় সময়কাল ২০ দিনের মতো (৮ থেকে ৩৭ দিনের মধ্যে)। তবে, যে ৫৪ জন মারা গেছেন তাদের দেহে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভাইরাসটি সনাক্ত করা গেছে।

ভাইরাল শেডিং সময়কালের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। গবেষকরা বলছেন, ভাইরাল শেডিংয়ের সময়কাল রোগের তীব্রতার দ্বারা প্রভাবিত হয়। গবেষণার সময় সব রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এবং তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ গুরুতর অসুস্থ ছিলেন।

চীনে অবস্থিত চীন-জাপান ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল এবং ক্যাপিটাল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিন কাও বলেন, আমাদের গবেষণায় উল্লিখিত বর্ধিত ভাইরাল শেডিংয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। যা কোভিড-১৯ সংক্রামিত রোগীদের ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নতা সতর্কতা (কোয়ারেন্টাইন) এবং অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্তের দিকনির্দেশনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া দরকার যে ভাইরাল শেডিংয়ের সময়ের সঙ্গে যাদের লক্ষণ দেখা যায়নি, তাদের স্ব-বিচ্ছিন্নতা (কোরেন্টাইন) গাইডেন্সের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, কারণ এই নির্দেশিকাটি ভাইরাসের ইনকিউবেশন সময়ের উপর নির্ভর করে।

গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, হাসপাতাল থেকে রোগীদের ছাড়ার আগে তার দেহে কোভিড-১৯ নেই তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা উচিত।

গবেষকরা আরও উল্লেখ করেছেন, কার্যকর অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা কোভিড-১৯ এর ফলাফলের উন্নতি ঘটাতে পারে, যদিও তারা গবেষণায় অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসার পরে ভাইরাল শেডিংয়ের সময়কাল পর্যবেক্ষণ করেননি।

সুস্থ হওয়া কিংবা মারা যাওয়া উভয় রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বর প্রায় ১২ দিনের মতো স্থায়ী ছিল। তবে, কাশি দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে। হাসপাতাল থেকে অব্যাহতি পাওয়ার সময় সুস্থ হয়ে ওঠা ৪৫ শতাংশ লোকের কাশি ছিল।

জীবিতদের মধ্যে ডিস্পোনিয়া (শ্বাসকষ্ট) প্রায় ১৩ দিন পরে বন্ধ হয়ে যায়, তবে যারা মারা গেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাদের শ্বাসকষ্ট ছিল। তথ্যসূত্র: দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: