প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস এক আজব ভাইরাস বটে। বিশ্বের একেক প্রান্তে এ ভাইরাস একেক আচরণ করছে। স্থান ও আবহাওয়া অনুযায়ী ভাইরাসটি নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে সহজেই। এছাড়া এতদিন সবাই জেনেছে যে, করোনাভাইরাস মানুষের শ্বাসযন্ত্র বা ফুসফুসে আক্রমণ করে থাকে। ফলে মানবদেহ ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। আর এ কারণেই করোনায় মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক।
কিন্তু মহামারী এ ভাইরাস নিয়ে এবার আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট’। ম্যাগাজিনটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, করোনাভাইরাস শুধু শ্বাসযন্ত্র বা ফুসফুসেই নয় বরং এটি মানবদেহের পুরো রক্তের সংবাহন ও গতিপ্রকৃতিতে আক্রমণ করে। যে কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি খুব দ্রুত নিস্তেজ হয়ে পড়ছেন। মানবদেহ অকার্যকর হয়ে পড়ছে।
করোনা নিয়ে গবেষণাকারী ও জার্মানির জুরিখ ইউনিভার্সিটি হসপিটালের অধ্যাপক ফ্রাঙ্ক রুশিৎজকা বলেন, কোভিড-১৯ কেবল মানবদেহের শ্বাসযন্ত্রেই নয়, ভাইরাসটি মানবদেহের ধমনী, শিরা, উপশিরা সবখানেই আক্রমণ করে।
ফ্রাঙ্ক আরও জানান, করোনার আক্রমণের ফলাফল নিউমোনিয়ার চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মক এবং ভয়াবহ। ভাইরাসটি মানবদেহের রক্ত সংবহন তন্ত্রের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র রক্তনালীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।
তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস মানবদেহের এন্ডোথেলিয়ামে (কোষের স্তর) প্রবেশ করে, যা রক্তনালীর প্রতিরক্ষা রেখা। এভাবেই এটি আমাদের শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয় এবং মাইক্রোসার্কুলেশনে বাধার সৃষ্টি করে।
ভাইরাসটি এরপর দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত সরবরাহ কমিয়ে দিতে থাকে এবং এক পর্যায়ে রক্ত সঞ্চালন পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় বলে জানান অধ্যাপক ফ্রাঙ্ক রুশিৎজকা।
তিনি বলেন, এ কারণেই আমরা দেখেছি যে, করোনা আক্রান্ত রোগীদের হৃদপিণ্ড, যকৃত ও অন্ত্রসহ প্রায় সব অঙ্গেরই সমস্যা দেখা দেয়। যারা ধূমপায়ী এবং যাদের এন্ডোথেলিয়াল ফাংশনের পূর্ব দুর্বলতা রয়েছে অথবা রক্তনালী অপুষ্ট, তারা করোনাভাইরাসের সহজ শিকার।
এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থুলতা ও কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও দুর্ভাগ্যক্রমে করোনার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছেন বলে জানান অধ্যাপক ফ্রাঙ্ক। সূত্র- সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
টাইমস/এসএন/এইচইউ