কোভিড-১৯ মোকাবেলায় আশা জাগাচ্ছে যেসব ওষুধ

কোভিড-১৯ রোগ ইতিমধ্যে বিশ্বের ৪৫ লাখেরও বেশি মানুষকে আক্রান্ত করলেও এর বিরুদ্ধে সত্যিকার অর্থে কার্যকর কোনো ওষুধ বা চিকিৎসা এখন পর্যন্ত বাজারে আসেনি। তবে দেশে দেশে বিজ্ঞানীরা রোগটির বিরুদ্ধে কার্যকর ওষুধ তৈরিতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইতিমধ্যে জরুরি অবস্থায় রেমডিসিভির নামক একটি ওষুধ কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। তবে, ওষুধটি কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে জাদুকরী কোনো ফলাফল দিতে পারে না বলে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা যেসব পদক্ষেপ নিতে চলেছেন তার অগ্রগতি সম্পর্কে প্রথম থেকেই বাংলাদেশ টাইমস পাঠকদেরকে অবহিত করে চলেছে। আজকেও আমরা কোভিড-১৯ চিকিৎসার ওষুধ তৈরির অগ্রগতি সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরছি।

১১এ ও ১১বি
সম্প্রতি চীনা বিশেষজ্ঞরা সার্স-কোভ-২ বা নোভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর হতে পারে এমন দু’টি যৌগিক উপাদানের সন্ধান পেয়েছেন। যৌগ দু’টিকে বলা হচ্ছে ১১এ ও ১১বি।

ভাইরাসটির তথাকথিত প্রোটেস অর্থাৎ এক ধরণের এনজাইম, যা ছাড়া ভাইরাস টিকে থাকতে পারে না, সেটিকে যৌগ দু’টি আক্রমণ করে। ফলে যৌগ দু’টি নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যৌগ দু’টি ইতিমধ্যে প্রাণীদেহে পরীক্ষায় তাদের কার্যকারিতার প্রমাণ দিয়েছে। তুলনামূলকভাবে ১১এ প্রাণীদেহের জন্য কম ক্ষতিকর হওয়ায় বিজ্ঞানীরা এই যৌগটিকে নিয়ে বেশি আশাবাদী।

যৌগটি যে এনজাইমকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায় মানবদেহে তার সমগোত্রীয় এনজাইম না থাকায় এটি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হবে না বলে মনে করছেন গবেষকরা।

পিবি-২৮
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার প্রফেসর নাভান জে ক্রোগান ও তার দল নতুন যৌগ আবিষ্কারের থেকে ইতিমধ্যে ব্যবহৃত বা পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এমন ওষুধ দ্বারা কোভিড-১৯ চিকিৎসা করা যায় কিনা সে বিষয়ে বেশি আগ্রহী। ইতিমধ্যে গবেষণায় তারা কোভিড-১৯ রোগটির বিরুদ্ধে ‘পিবি-২৮’ নামক একটি পরীক্ষামূলক ক্যান্সার প্রতিরোধী ওষুধের কার্যকারিতার প্রমাণ পেয়েছেন। তাদের গবেষণা বলছে- এটি হাইড্রোস্কিক্লোরোকুইনের থেকে ২০গুণ বেশি কার্যকর। এখন প্রাণীদেহে এটি পরীক্ষা করা ও ক্লিনিক্যাল ট্রাইল প্রয়োজন বলে মনে করছেন গবেষকরা।

ইন্টারফেরন বিটা-১ বি এর যৌথ প্রয়োগ
ইন্টারফেরন বিটা-১ বি, লোপিনাভির-রিটোনাভির ও রিবাভাইরিন এই তিনটি ওষুধের যৌথ প্রয়োগ কোভিড-১৯ চিকিৎসায় বেশ কার্যকর। ইতিমধ্যে এর ২য় ধাপের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে, ওষুধটি এখন ৩য় ধাপে পরীক্ষা করে দেখা হবে।

তিনটি ওষুধের যৌথ প্রয়োগ কোভিড-১৯ এর উপসর্গগুলি উপশম করতে, ভাইরাল শেডিংয়ের সময়কাল হ্রাস করতে এবং হাসপাতালে অবস্থানের সময় হ্রাস করতে কার্যকর ও নিরাপদ। তবে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে বমি বমি ভাব দেখা গেছে, যা কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই সেরে যায়।

রেমডিসিভির
কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে প্রথম কোনো ওষুধ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি ব্যবহারের স্বীকৃতি পেয়েছে রেমডিসিভির। গবেষকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, রেমডিসিভির ওষুধটির প্রয়োগে করোনা সংক্রমিত রোগী ১৪ দিনের পরিবর্তে মাত্র ১১ দিনেই সুস্থ হয়ে ওঠেন, তবে তারা গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করেননি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লুএইচও) কর্তৃক রেমডিসিভির বিষয়ক সর্বপ্রথম প্রকাশিত একটি পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা গেছে যে, পরিসংখ্যানগত ভাবে ওষুধটি ব্যবহারের উল্লেখযোগ্য কোনো সুবিধা নেই। তথ্যসূত্র: মেডিক্যাল নিউজ টুডে

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: