সাপে কাটলে কী করবেন

এখন বর্ষাকাল। তার ওপর দেশের ৩১টি জেলা বন্যা কবলিত। এই সময় আমাদের দেশে সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। বর্ষা ও বন্যার পানি মাটির গর্তে ঢুকলে বেঁচে থাকার জন্য সাপ বের হয়ে আসে এবং মানুষের সন্ধানে ছুটে। এসময় নিজের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লেই সাপ মানুষকে দংশন করতে পারে। সাপের বিষ মানুষের মস্তিষ্ক, রক্ত বা মাংসপেশিকে দ্রুত নষ্ট করে ও শ্বাসকষ্ট তৈরি করে। বিষাক্ত সাপ ছোবল দেয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই বিষের কার্যকারিতা শুরু হয় এবং দ্রুত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব না হলে মৃত্যুর আশংকা থাকে শতভাগ।

এখনও পুরনো দিনের ধারণা অনেকের মধ্যে আছে যে, ওঝা দিয়ে বিষ চুষে ফেললে রোগী সুস্থ হয়ে যায়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এই ধারণা এখনও বিদ্যমান। এজন্য তারা সাপে কাটা রোগীকে বিভিন্ন ওঝা, পীর-ফকির বা সর্পরাজের কাছে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। ওঝা কেবল ওইসব রোগীকে সারিয়ে তুলতে পারে যাদের বিষহীন বা অবিষধর সাপ দংশন করে। এটা বোঝা খুবই কঠিন বিষয়, যে সাপটি কামড় দিল সেটা বিষধর ছিল কিনা। নিশ্চিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুত আইসিইউ সুবিধাযুক্ত কোনও হাসপাতালে রোগীকে স্থানান্তর করা ভালো।

সাপের কামড়ে চাই দ্রুত চিকিৎসা

জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সাপে কাটা রোগী বেশি পাওয়া যায়। এক সময় মনে করা হতো সাপে কাটা মানেই মৃত্যু, কিন্তু এখন একথা আর সত্য নয়। কারণ বেশিরভাগ সাপই বিষধর নয়, সময়মতো হাসপাতালে নিলে বিষধর সাপের কামড়ে মৃত্যু হার নেই বললেই চলে।

বিষধর সাপ দংশনের লক্ষণ

বমি। মাথাঘোরা। কামড়ানোর স্থানে ফোলা। রক্তচাপ কমে যাওয়া। কিছুক্ষণ পর স্নায়ুগত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়া। যেমন- চোখে ডাবল দেখা। এমন হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

হাসপাতালে নেয়ার আগে যা করতে হবে

আক্রান্ত বা ক্ষত জায়গা নাড়াচাড়া করা যাবে না। হাত বা পায়ে কামড় দিলে ক্ষতের পেছনের দিকে কাঠ বা বাঁশের চটা বা শক্ত জাতীয় কিছু জিনিস রেখে শাড়ির পাড় বা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে স্প্লিন্ট তৈরি করে বেঁধে দিতে হবে। আক্রান্ত জায়গা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে। লক্ষ্য রাখবেন বেশি টাইট করে বাঁধা যাবে না। বাঁধলে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়ে গ্যাংগ্রিন হতে পারে। বিষ শিরা দিয়ে নয়, লসিকাগ্রন্থি দিয়ে শরীরে ছড়ায়। তাই ভয় না পেয়ে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়াই উত্তম।

অবশ্য পালনীয়

সাপে কাটা রোগীকে ওঝা-বৈদ্য বা কবিরাজ না দেখিয়ে বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক চিকিৎসার জন্য নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে Anti snake venom দিলে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা ৮০-৯০ ভাগ। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও জেলা সদর হাসপাতালে সাপের বিষের প্রভাব প্রতিরোধী ওষুধ অ্যান্টিভেনম মজুত রয়েছে। এটিই সাপে কাটা রোগীর একমাত্র চিকিৎসা। মনে রাখবেন এসব চিকিৎসা কেবল হাসপাতালেই করা সম্ভব, অন্য কোথাও নয়।

যা করবেন না

  • ক্ষতস্থানে কখনোই ব্লেড দিয়ে কেটে মুখ দিয়ে রক্ত চুষে বের করার চেষ্টা করা উচিত নয়।
  • আক্রান্ত জায়গায় কাঁচা ডিম, চুন, গোবর, লোশন বা কোনো কিছুই লাগাবেন না। এতে সেল্যুলাইটিস বা ইনফেকশন হয়ে রোগীর মৃত্যু ত্বরান্বিত হতে পারে।
  • হাসপাতালে নেওয়ার পথে রোগীর কথা বলতে অসুবিধা হলে কিংবা মুখ থেকে লালা ঝরলে রোগীকে কিছু খেতে দিবেন না।

সাপের দংশন এড়ানোর উপায়

  • বেশিরভাগ সর্পদংশন করে থাকে পায়ে। কাজেই সাপ থাকতে পারে এমন জায়গায় হাটার সময় বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। জুতা, লাইট ইত্যাদি সঙ্গে রাখতে হবে।
  • সাপ সামনে পড়ে গেলে ধীর-স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা উচিত। সাপ প্ররোচনা বা নিরাপত্তা হুমকির মুখে না পড়লে কাউকে দংশন করে না।
    দুর্ভাগ্যবশত যদি কাউকে সাপ কামড় দেয় তবে শান্ত থেকে কারো সাহায্য নিতে হবে। সর্পদংশনের পর কখনো দৌড়ানো উচিত নয়। এতে বিষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
  • সর্বোপরি সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সাপের কামড়ে অপমৃত্যু অনেকাংশে রোধ করা যাবে।

 

টাইমস/এসই/এইচইউ

Share this news on: