দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘ এক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাকে নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল থেকে মিরপুরের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) পাঠানো হয়েছে।
ওয়াহিদাকে বিদায় দেওয়ার পর তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের নিউরো ট্রমা বিভাগের প্রধান নিউরোসার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, যখন তিনি আহত হয়ে এখানে ভর্তি হন তখন তার অবস্থা ছিল অত্যন্ত সংকটাপন্ন। আমরা যখন তাকে দেখেছি, তখন অপারেশন করার মতো অবস্থায় তিনি ছিলেন না। আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অপারেশন করার মতো একটা অবস্থায় নিয়ে আসি। তারপর তার অপারেশন করেছি।
তিনি বলেন, অপারেশনের পর প্রথমে তার ব্রেন ঠিক মতো কাজ করছিল না। প্রেসার ঠিক ছিল না। তবে দু-তিন দিনের মধ্যে তিনি একটু সুস্থ হলেও ডানপাশ কোনোভাবেই কাজ করছিল না। শরীরের ডান পাশে তার পাওয়ার (শক্তি) শূন্য ছিল। এক সপ্তাহ পর থেকে তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করেন। শরীরের ডান পাশটা নাড়াতে শুরু করেন। এরপর বিগত প্রায় তিন সপ্তাহের চিকিৎসায় আল্লাহর রহমতে তিনি এখন ডান পাশ পুরোটাই নাড়াতে পারছেন এবং হাঁটতে পারছেন। একটু আগে তিনি হেঁটে অ্যাম্বুলেন্সে উঠেছেন। এখানে তার অপারেশনটা একশভাগ সাকসেসফুল হয়েছে বলে আমরা বলতে পারি।
ওয়াহিদার বর্তমান শারীরিক অবস্থা বিষয়ে ডা. জাহেদ বলেন, তার ডান হাত ডান পায়ের শক্তি ফিরে এসেছে। যদিও শতভাগ ফেরেনি। সেজন্য তাকে আমরা মিরপুরের সিআরপিতে রেফার্ড করেছি। ওখানে তাকে ফিজিওথেরাপি দেয়া হবে। আশা করি ফিজিওথেরাপিতে ইনশাআল্লাহ তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা আগেও বলেছি, শুরুতে তার ব্রেইন ড্যামেজ ছিল। মাথার খুলির হাড্ডি ভেঙে ব্রেনের ভেতর ঢুকে গিয়েছিল। সেটা আমরা অপারেশন করে তুলে দিয়েছি। যে কারণে তার ব্রেনে ড্যামেজ হয়েছিল, যেটা আমরা বলি কনটিউশন। ব্রেনের ড্যামেজটা রিকভার হয়েছে। তিনি এখন হাঁটতে পারছেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনওর সরকারি বাসভবনে ঢুকে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। ভেতরে ঢুকে ভারী ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং আঘাত করে ইউএনও ওয়াহিদাকে গুরুতর জখম করে তারা। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে এলে বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকেও (৭০) জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে তারা অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ভোরে স্থানীয়রা টের পেয়ে তাদের উদ্ধার করেন।
ওয়াহিদাকে প্রথমে রংপুর এবং পরে রংপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় আনা হয়। তারপর থেকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ওয়াহিদা।
আরও পড়ুন
ইউএনও ওয়াহিদা ওএসডি, স্বামী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে
ইউএনও ওয়াহিদা শঙ্কামুক্ত: চিকিৎসক
টাইমস/এইচইউ