শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সংক্ষিপ্ত জীবনী

“এখনতো চারিদিকে রুচির দুর্ভিক্ষ! একটা স্বাধীন দেশে সুচিন্তা আর সুরুচির দুর্ভিক্ষ! এই দুর্ভিক্ষের কোন ছবি হয়না।” এটি বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের বিখ্যাত একটি উক্তি।

জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম তমিজউদ্দিন আহমদ। তিনি ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তার মায়ের নাম জয়নাবুন্নেছা। তার নয় ভাইবোনের মধ্যে জয়নুল আবেদিন ছিলেন সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন।

পূর্ববঙ্গের প্রথম প্রজন্মের শিল্পীদের পুরোধা ব্যক্তিত্ব জয়নুল আবেদিন। জয়নুল আবেদিনের উদ্যোগে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পুরান ঢাকার জনসন রোডের ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুলের একটি জীর্ণ কক্ষে গভর্নমেন্ট আর্ট ইন্সটিটিউট স্থাপিত হয়। তিনি এর প্রথম শিক্ষক ছিলেন। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর একই প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়’। তিনি ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জয়নুল আবেদিনের প্রচেষ্টায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে লোকশিল্প জাদুঘর ও ময়মনসিংহে জয়নুল সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা হয়।

১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের ছবি চিত্রমালার জন্য তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তার চিত্রকর্মের মধ্যে অন্যতম ১৯৫৭-এ নৌকা, ১৯৫৯-এ সংগ্রাম, ১৯৭১-এ বীর মুক্তিযোদ্ধা, ম্যাডোনা। তার দীর্ঘ দুটি স্ক্রল ১৯৬৯-এ অংকিত ‘নবান্ন’ এবং ১৯৭৪-এ অংকিত ‘মনপুরা-৭০’ জননন্দিত দুটি শিল্পকর্ম। অনুমান করা হয় তার চিত্রকর্ম তিন হাজারেরও বেশি।

১৯৪৬ সালে জয়নুল আবেদিন ঢাকা নিবাসী তৈয়ব উদ্দিন আহমদের কন্যা জাহানারা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি তিন পুত্রের জনক। তার জ্যৈষ্ঠ পুত্র সাইফুল আবেদিন স্থপতি। বর্তমানে তিনি আমেরিকা প্রবাসী। দ্বিতীয় পুত্র খায়রুল আবেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল বিষয় নিয়ে এমএ এবং কনিষ্ঠ পুত্র মঈনুল আবেদিন(মিতু) প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পানি-সম্পদ বিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।

চিত্রশিল্প বিষয়ক শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি ‌‘শিল্পাচার্য’ অভিধা লাভ করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের সবচেয়ে বড় খেতাব হেলাল-ই-ইমতিয়াজ, ১৯৬৮ সালে ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্রদের তরফ থেকে 'শিল্পার্চায' উপাধি এবং ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে জাতীয় অধ্যাপকের সম্মান লাভ করেন। ১৯৩৮ সালে চিত্র প্রদর্শনীতে তিনি নিখিল ভারত স্বর্ণপদক লাভ করেন।

জয়নুল আবেদিন ১৯৭৬ সালের ২৮ মে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

 

টাইমস/এসআর/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের May 07, 2024
img
কুষ্টিয়ায় বেঙ্গল টোব্যাকো গোডাউনে অভিযান: রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ May 07, 2024
img
উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার আগে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিবেচনা করুন : প্রধানমন্ত্রী May 07, 2024
img
বান্দরবানে যৌথ অভিযানে কেএনএফের এক সন্ত্রাসী নিহত, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার May 07, 2024
img
ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুল-এর প্রশিক্ষণ উন্নয়নে যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা May 07, 2024
img
ভোট কেন্দ্রে অনুপ্রবেশকারীদের প্রতি সিইসির কঠোর হুঁশিয়ারি May 07, 2024
img
ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে কোক স্টুডিও বাংলা, ফের সমালোচনা May 07, 2024
img
দেশে যানবাহনের নতুন স্পিড লিমিট, মোটরসাইকেলের গতি নামানো হলো ৬০-এ May 07, 2024
img
সূর্যকুমারের সেঞ্চুরিতে জয়ে ফিরল মুম্বাই May 07, 2024
img
রাফায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে নিহত ১২, যুদ্ধবিরতি অনিশ্চিত May 07, 2024