রোবট তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন বরিশালের আগৈলঝাড়ার ক্ষুদে বিজ্ঞানী সুজন পাল। একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুজন পাল জানান বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে বঙ্গ নামের এই রোবট। সুজনের বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর, তখনই রোবট বানানোর স্বপ্ন বাসা বাঁধে তার মনে। তবে স্বপ্নবাজ এই মেধাবী কিশোরের স্বপ্নপূরণে ছিল হাজারও বাধা।
গৈলার শ্রীপাশা গ্রামের জয়দেব-শবিতা পাল দম্পতি ছোট ছেলে সুজন পাল। মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি করাই তাদের পারিবারিক পেশা। সেই উপার্জনে কোনোরকম চলে সংসার। এ অবস্থায় সুজনের রোবট তৈরির বিষয়টি ছিল অনেকটা দিবাস্বপ্নের মতো। বছর পাঁচেক আগেও ওই গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। রোবট তৈরির জন্য আধুনিক গবেষণাগার, যন্ত্রাংশ ও অভিজ্ঞতা অর্জনেরও কোনো সুযোগ ছিল না তার। তবে অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর আত্মবিশ্বাসের জোরে স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিয়েছে সে।
সুজন জানান, বাড়ি ও অফিস-আদালত কিংবা যেকোনো প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগলে মুহুর্তেই নিকটস্থ ফায়ার সার্ভিসকে খবর পৌঁছে দেবে বঙ্গ। এছাড়া গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ হলে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ সংকেতের মাধ্যমে জানিয়ে দেবে ঘরে থাকা লোকজনকে। আবার রোবটটি প্রাথমিক শিক্ষক, প্রয়োজনে চিকিৎসক হিসেবে প্রাথমিক চিকিৎসাও দিতে পারবে। সেই সঙ্গে কৃষকের কৃষি কাজে, বিশেষ করে ফসলের রোগ বালাই মোকাবিলায় পরামর্শ দেবে এ রোবট।
উল্লিখিত কাজগুলো ছাড়াও সুজনের রোবটটি বেশ বিনয়ীও। কেউ করমর্দন করতে চাইলে সে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হাত বাড়িয়ে দেয়। ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গুগলের বিশাল তথ্যভাণ্ডারে যুক্ত থাকে সে।
সুজন আরও জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে রোবটটিকে আরও আধুনিকভাবে তৈরি করে দেশের মানুষের সেবায় কাজে লাগানো সম্ভব।
এলাকাবাসী জানান, অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও পরিবার থেকে দেওয়া হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে এবং নিজে প্রাইভেট পড়িয়ে টাকা উপার্জন করে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে চার মাস চেষ্টার পর রোবটটি প্রস্তুত হয়। আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর সময়ে তৈরি করা এ রোবটটি বঙ্গবন্ধুর নামের সঙ্গে মিল রেখে নাম করণ করা হয় “বঙ্গ’’।
‘বঙ্গ’ নামের রোবটটি তৈরি করা হয়েছে ‘সোফিয়া’র অনুকরণে। বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে এটি দেখার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন সুজনের বাড়িতে ভিড় করছেন উৎসুক মানুষ।
ক্ষুদে বিজ্ঞানী সুজনের রোবট উদ্ভাবনের খবরে উচ্ছসিত উপজেলা প্রশাসনও। তার তৈরি রোবটটি প্রযুক্তিগতভাবে আরও সমৃদ্ধ করতে সরকারের সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয় থেকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম।
টাইমস/এসজে