করোনা প্রতিরোধে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার

প্রতিদিন কয়েক হাজার করে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন করোনায়।এমতাবস্থায় ডাক্তারদেরও হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসা সেবা দিতে। ফলে আমাদের নিজেদের সচেতন হওয়া ছাড়া অন্য উপায় আপাতত নেই।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হলো ব্যক্তিগত সচেতনতা গড়ে তোলা এবং প্রত্যেকের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্থাৎ ইমিউন সিস্টেম বাড়িয়ে তোলা। এর ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে মারাত্মক লক্ষ্মণ অর্থাৎ শ্বাসযন্ত্র এবং পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণ, সেগুলো সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
সহজভাবে বললে, যেকোনো ভাইরাস হলো প্রোটিন যুক্ত অণুজীব, যার কারণে মানুষ জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট এমনকি মারাত্মক নিউমোনিয়ায় (নতুনভাবে) আক্রান্ত হতে পারে। তা ছাড়া এই ভাইরাস ভয়ংকর প্রাণঘাতী রোগ তৈরি করতে পারে খুব সহজে। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেশি পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে প্রতিদিন।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হলো কিছু ভিটামিন, মিনারেল ও এনজাইম, যা শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে, শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে শরীরে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। 

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার

প্রধান অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো হল বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, সি, ই, লাইকোপেন, লুটেইন সেলেনিয়াম ইত্যাদি। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবারগুলো প্রতিদিন রাখতে পারেন আপনার খাদ্য তালিকায়।

বিটা ক্যারোটিন: বিটা ক্যারোটিন শরীরে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম গড়তে এটা খুবই দরকারি। উজ্জ্বল রঙের ফল ও সবজিতে এটা পাওয়া যায়। যেমন খেজুর, গাজর, পালংশাক, আলু, আম, ডাল, ব্রকলি ইত্যাদি।

ভিটামিন এ: ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ডিম, কলিজা, দুধজাতীয় খাবার। এছাড়া মিষ্টি আলু, সবুজ শাকসবজি, লাল মরিচ, গাজর, লাউ, ফুটি/খরমুজ, পেঁপে, আম, লেটুস, গুঁড়া মরিচ, এপ্রিকট ইত্যাদিতে ভিটামিন এ পাওয়া যায়।

ভিটামিন বি৬: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় জৈব রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন বি৬। চিকেন, স্যামন, টুনা, সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি৬ রয়েছে।

ভিটামিন সি: যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো নয় তারা নিয়মিত ভিটামিন সি খেলে কয়েক দিনের মধ্যেই পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন। ভিটামিন সি ভরপুর এমন খাবারের তালিকায় রয়েছে- কমলালেবু, আঙুর, স্ট্রবেরি, বেলপেপার, পালংশাক, ব্রকলি, পাতিলেবু।

ভিটামিন ডি: ডিম, পনির, টোফু ও মাশরুম। সূর্যের আলো তথা রোদ থেকেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।

ভিটামিন ই: ভিটামিন ই শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা বাড়ায়। আমন্ড, কাজু, আখরোট, কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, বাদাম তেল ও ভেজিটেবল অয়েল, জলপাইয়ের আচার, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি।

আমিষ: উচ্চমানের আমিষজাতীয় খাবার যেমন ডিম, মুরগির মাংস ইত্যাদি বেশি করে খেতে হবে।

চা: গ্রিন-টি, লাল চায়ে এল-থেনিন এবং ইজিসিজি নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা আমাদের শরীরে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনেক যৌগ তৈরি করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।

প্রোবায়োটিকস: প্রোবায়োটিকস শ্বাসযন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্র সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করে। টকদই ও দুধ থেকে প্রস্তুত খাবার এর আদর্শ উৎস। এছাড়াও রয়েছে সব ধরনের শস্যদানা, কলা, পেঁয়াজ, রসুন, অ্যাসপারাগাস ও শিমের মধ্যেও।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের খুব ভালো কাজ পেতে হলে খাবার রান্নার সময় অতিরিক্ত তাপে বা দীর্ঘ সময় রান্না না করে স্বল্প তাপমাত্রায় রান্না করতে হবে। ফলমূল-শাকসবজি ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে।যেন তা জীবাণুমুক্ত থাকে।

সবশেষে বলা যায়, সুস্বাস্থ্য অটুট রাখতে প্রতিদিন পরিমিত ব্যায়াম করা জরুরি। জীবনের শৃঙ্খলও দীর্ঘায়ু লাভের সহায়কে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

Share this news on: