ইজতেমা শুরুর আগেই মুসল্লিতে মুখরিত তুরাগ তীর

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি)। এদিন ফজরের নামাজের পর বয়ানের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিশ্ব সম্মিলনের কার্যক্রম শুরু হবে। তার আগেই মুসল্লিদের আগমনে ভরে উঠেছে টঙ্গীর তুরাগ তীর।

শীত উপক্ষো করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মুসলমানরা ইজতেমা মাঠে বানানো খিত্তায়-খিত্তায় জড়ো হচ্ছেন; এসেছেন বিদেশিরাও। বৃহস্পতিবার ভোরে ফজরের পর তাদের জন্য হয়েছে প্রাথমিক আম বয়ান। 

রবিবার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত চলবে তাবলীগের ছয় উসুলের এ বয়ান। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের আলেমরা মূল বয়ান করবেন। মূল বয়ান বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষাভাষীদের জন্য তাৎক্ষণিক তরজমা করে শোনানো হবে।

আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রবিবার ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষে ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি হবে দ্বিতীয় পর্ব।

প্রায় এক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশাল মাঠকে বাঁশের খুঁটির ওপর চটের ছাউনি দিয়ে ইজতেমার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বয়ান মঞ্চ করা হয়েছে ইজতেমা মাঠের পশ্চিম-উত্তরের মাঝ বরাবর। বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ ছাতা মাইক। বয়ান ও দোআ মঞ্চ ছাড়া নামাজের মিম্বরও তৈরি করা হয়েছে আলাদাভাবে।

আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. মাহফুজ জানান, মহামারির কারণে গত দুবছর বিশ্ব ইজতেমা না হওয়ায় এবার আগেভাগেই মানুষ এসেছেন। শুক্রবার মূল পর্ব শুরুর কথা থাকলেও তাবলীগ জামাতের অনুসারী এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বুধবার থেকেই দলে দলে ইজতেমা ময়দানে এসে অবস্থান নিচ্ছেন। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে ইজতেমা ময়দান প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে।

ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুন নূর জানান, পুরো মাঠকে জেলাওয়ারী আলাদা ৯১ ভাগে (খিত্তায়) ভাগ করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মানুষ থাকবেন সেসব খিত্তায়। বিদেশি মেহমান যারা আসছেন, তাদের বিমানবন্দরে স্বাগত জানাচ্ছেন আয়োজকরা। তাদের সুবিধার জন্য ইমিগ্রেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিদেশি মেহমানদের জন্য ইজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত আলাদা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও ময়দানের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য ইজতেমা ময়দান ছাড়াও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা বিধান করবেন। অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে এবার সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যুক্ত করেছে।

পুরো ময়দান এলাকায় থাকছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও র‌্যাবের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। বুধবার সকালে ইজতেমা ময়দানে দুটি গভীর নলকূপের উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর মিয়া জানান, এখানে ৩১টি টয়লেট বিল্ডিং করা হয়েছে। একসঙ্গে নয় হাজার মানুষ তা ব্যবহার করতে পারবেন।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, ময়দান ও আশপাশে ১৪টি নিয়ন্ত্রণকক্ষ রয়েছে পুলিশের। র‌্যাবের হেলিকপ্টারে টহল থাকবে। এছাড়া ডগ স্কোয়াড টিম, মোবাইল পেট্রোল টিম, বোম ডিসপোজল টিম থাকবে।

শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইজতেমায় আসা মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পাঁচটি ক্যাম্প স্থাপনের কাজ চলছে। এখান থেকে ২৪ ঘণ্টাই ওষুধ ও সেবা পাওয়া যাবে। হাসপাতালের সাতটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল এখানে মোতায়েন থাকবে।

Share this news on: