গর্ভবতী অবস্থায় যেসব খাবার খাওয়া জরুরি

গর্ভধারণের সময় খুবই সচেতন ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় নারীদের। এ সময়ে নারীকে সতর্কতার সঙ্গে জীবন পরিচালনা করতে বলা হয়। গর্ভে থাকা সন্তানের বেড়ে উঠা ও তার সুস্থতার জন্য খাদ্যতালিকায়ও অনেক পরিবর্তন আনতে হয় নারীদের। নিয়ম অনুযায়ী জীবন-যাপন করলে মা ও সন্তান, দু’জনেরই স্বাস্থ্য ভালো থাকে। আর সন্তান জন্মের পর তারও বেড়ে উঠা কিংবা শারীরিক-মানসিক সুস্থতা স্বাভাবিক হয়।

এবার স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইনের বরাত গর্ভাবস্থায় নারীর যেসব খাবার খাওয়া উচিত সেসব সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

দুগ্ধজাত পণ্য : গর্ভাবস্থায় পেটে থাকা শিশুর চাহিদা মেটাতে অন্তঃসত্ত্বার অতিরিক্ত প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়। এ কারণে এই সময় দুগ্ধজাত পণ্য যেমন দুধ, পনির ও দই খাওয়া যেতে পারে। দুগ্ধজাত পণ্যে দুই ধরনের উচ্চমানের প্রোটিন থাকে। দুগ্ধ হচ্ছে ক্যালসিয়ামের বিশ্বস্ত উৎস। এটি ফসফরাস, ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক সরবরাহ করে।

লেগুস : এর মধ্যে মসুর, মটর, মটরশুটি, ছোলা, সয়াবিন ও চিনাবাদাম রয়েছে। এসব খাবার হচ্ছে ফাইবার, প্রোটিন, আয়রন, ফোলেট ও ক্যালসিয়ামেরে উদ্ভিদভিত্তিক উৎস। যা গর্ভাবস্থায় শরীরের জন্য বেশি প্রয়োজন।

ফোলেট প্রয়োজনীয় ভিটামিন-বি এর মধ্যে একটি (B9)। এটি অন্তঃসত্ত্বা ও তার গর্ভের শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে প্রথম তিন মাসের সময়। তবে লেগুসে ফাইবার বেশি থাকে এবং আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়ামও বেশি থাকে। এ জন্য মসুর ডালের তরকারির মতো খাবারের সঙ্গে লেবু যোগ করার কথা মনে রাখবেন।

মিষ্টি আলু : বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ এটি। যা উদ্ভিদ যৌগ, আপনার শরীরে ভিটামিন এ রূপান্তর করে। ভিটামিন এ শিশুর বিকাশের জন্য অপরিহার্য। তবে অত্যধিক ভিটামিন এ, প্রাণিজ পণ্য থেকে বিষাক্ততা হতে পারে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।

সালমন : সালমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এর ব্যাপক উপকারিতা রয়েছে। সামুদ্রিক খাবারে ওমেগা-৩ থাকে। এসব খাবার শিশুর মস্তিষ্ক ও চোখ তৈরিতে সাহায্য করে এবং গর্ভকালীন বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

ডিম : ডিম খুবই স্বাস্থ্যকর খাবার। এতে প্রয়োজনীয় প্রায় সব পুষ্টি সামান্য পরিমাণে বিদ্যমান। একটি বড় ডিমে প্রায় ৭১ ক্যালোরি, ৩.৬ গ্রাম প্রোটিন, চর্বি এবং ভিটামিন ও খনিজ থাকে। এছাড়া ডিম কোলিনের একটি বড় উৎস, গর্ভাবস্থায় এটি গুরুত্বপূর্ণ। একটি ডিম প্রায় ১৪৭ মিলিগ্রাম কোলিনের বিশ্বস্ত উৎস।

ব্রোকলি ও পাতাযুক্ত সবুজ শাক : ব্রোকলি ও পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজি যেমন পালং শাকে প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি রয়েছে। এসবের স্বাদ যদি আপনার পছন্দ না হয় তাহলে স্যুপ, পাস্তা, কিংবা অন্য কিছুতে যুক্ত করে খেতে পারেন। এসব খাবারে ফাইবার. ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফোলেট ও পটাসিয়াম রয়েছে। ফাইবার উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

চর্বিহীন মাংস ও প্রোটিন : চর্বিহীন গরুর ও মুরগির মাংসে উচ্চ মানের প্রোটিন থাকে। মাংস ছাড়ও আয়রন, কোলিন ও অন্যান্য ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার গর্ভাবস্থায় বেশি পরিমাণে প্রয়োজন। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে এবং মাঝামাঝি সময়ে আয়রনের মাত্রা কম হলে রক্তাল্পতা হতে পারে। যা কম ওজনের জন্ম ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়।

বেরি : বেরিতে স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন সি, ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। এটি দুর্দান্ত একটি খাবার। এতে পানি ও ফাইবার উভয়ই রয়েছে। এটি পুষ্টি সরবরাহ করে। এ জন্য গর্ভাবস্থায় ব্লুবেরি, স্ট্রবেরিসহ বেরি জাতীয় ফল খাওয়ার কথা বলা হয়। প্রয়োজনে বেরির স্মুদি খেতে পারেন।

অ্যাভোকাডোস : অ্যাভোকাডোতে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন কে, পটাসিয়াম, কপার, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি সরবরাহ করে।

ড্রাই ফ্রুটস : ড্রাই ফ্রুটসে সাধারণ ক্যালোরি, ফাইবার ও বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ থাকে। ড্রাই ফ্রুটসেও অনেক পুষ্টি থাকে। ড্রাই ফ্রুটসে ফাইবার, পটাসিয়াম ও ভিটামিন কে রয়েছে। যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, পটাসিয়াম, আয়রন ও উদ্ভিদ যৌগ থাকে। এছাড়া বাদাম ও অন্যান্য বীজ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

তবে গর্ভাবস্থায় উচিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে জীবন পরিচালনা করা। একই সঙ্গে যেকোনো সমস্যা উপেক্ষা না করে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ভালো।

Share this news on: