মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার গল্প

মার্কিন সফল প্রেসিডেন্টদের একজন বারাক ওবামা। তিনি আমেরিকার ৪৪তম এবং প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। ২০০৮ সালে ডেমোক্রেট দল থেকে প্রথমবার এবং ২০১২ সালে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি।

তার পুরো নাম বারাক হোসেন ওবামা জুনিয়র। ১৯৬১ সালের ৪ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে তার জন্ম।

তার পিতা বারাক ওবামা সিনিয়র কেনিয়ার নিয়াঞ্জি প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি উচ্চতর শিক্ষার জন্য বৃত্তি নিয়ে হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন। এখানে তার সহপাঠী মার্কিন নাগরিক এন দানহামের সাথে পরিচয় হয়। ১৯৬১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তারা বিয়ে করেন। বিয়ের ৬ মাস পর তাদের ঘরে বারাক ওবামা জুনিয়র এর জন্ম।

১৯৬৪ সালে তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ১৯৬৫ সালে মা দানহাম একজন ইন্দোনেশিয়ানকে বিয়ে করে জাকার্তা চলে আসেন। এ সময় ওবামা তার নানা-নানীর সাথে হাওয়াইয়ে থেকে যান। এখানেই নানা-নানীর সাথে তার শৈশব কাটে।

আর্থিক অস্বচ্ছলতা থাকা স্বত্তেও নানা-নানী ওবামাকে হাওয়াইয়ের ঐসময়ের সেরা স্কুলে ভর্তি করেন। স্কুলে থাকার সময় ওবামা বর্ণবাদের শিকার হন। তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে ১৯৮৮ সালে হার্ভার্ড ল’ স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৯০ সালে তিনি প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান হিসেবে হার্ভার্ড ল’ রিভিউ এর সম্পাদক নিযুক্ত হন।

পরে তিনি গৃহায়ন এবং কর্মসংস্থান বৈষম্যের শিকার নাগরিকদের আইনি অধিকার নিয়ে কাজ করতে শিকাগোতে চলে আসেন। আইন পেশার পাশাপাশি তিনি ১৯৯৪ থেকে ২০০২ পর্যন্ত শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ স্কুলে অধ্যাপনা করেন। ১৯৯২ সালে তিনি তার সহকর্মী মিশেল রবিনসনকে বিয়ে করেন। তাদের দুই মেয়ে শশা ওবামা এবং মালিয়া ওবামা।

১৯৯৫ সালে তিনি ‘Dreams from My Father: A Story of Race and Inheritance’ নামে আত্মজীবনী লিখেন যা ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এটি বিশ্বের ২৫টির বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ২০০৬ সালে বইটির অডিও ভার্সন ‘Dreams’ গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড পায়।

১৯৯৬ সালে তিনি ইলিনয় রাজ্যের সিনেটর নির্বাচিত হন। এসময় নৈতিক আইন প্রণয়ন, দরিদ্রদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং শিশু শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারিত করতে তিনি ডেমোক্রেটস এবং রিপাবলিকান উভয়ের সাথে কাজ করেন। ২০০২ সালে তিনি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এর সদস্যপদে নির্বাচন করে হেরে যান। পরে ২০০৪ সালে তিনি ডেমোক্রেট দল থেকে যুক্তরাষ্ট্র আইনসভার সিনেটর নির্বাচিত হন।

২০০৭ সালে তিনি হিলারি ক্লিন্টনকে হারিয়ে ডেমোক্রেট দল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত হন। ২০০৮ সালের সাধারন নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং ২০১২ সালে পুনঃনির্বাচিত হন।

দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি বেশ কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার কয়েকটি হচ্ছে-

১. ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার।
২. শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা কর্মসূচির সম্প্রসারণ।
৩. নারীদের জন্য সমান মজুরি নিশ্চিতকরণ।
৪. মার্কিন অর্থনীতির পুনরুদ্ধার।
৫. কর্মসংস্থান বৃদ্ধি।
৬. ইরানের সাথে ছয় জাতির পরমাণু চুক্তি।
৭. কিউবার সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন।
৮.ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা।
৯. প্যারিস জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষর।
১০. জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে ‘ক্লিন পাওয়ার প্লান পরিকল্পনা’ গ্রহণ।
১১. আমেরিকায় অস্ত্র ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কঠোরতা আরোপ ইত্যাদি।

পূর্ববর্তী বুশ প্রশাসনের বিপরীতে ওবামার বিদেশনীতি এবং আন্তর্জাতিক উদ্যোগ সমূহ বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ফলস্বরূপ ২০০৯ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।

২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি শিকাগোতে তার বিদায়ী ভাষণে বলেন, “আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছি যে, পরিবর্তন তখনই সম্ভব হয় যখন সাধারণ লোকজন পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং এটা দাবি করে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়”।

Share this news on: