ওষধি গুণে ভরপুর হেলেঞ্চা শাক

হেলেঞ্চা আমাদের সবার কাছে পরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ। মূলত এটি এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ। যা শাক হিসেবেও খাওয়া যায়। ইংরেজিতে একে বলা হয়- Enhydra, Buffalo spinach, Helancha ইত্যাদি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Enhydra fluctuans যা Asteraceae পরিবারভুক্ত।

আমাদেরে দেশে অঞ্চল বেধে একে হিঞ্চা, হিঞ্চে, হিংচা, হেলচী, হিমলোচিকা, তিতির ডগা, তিতির শাক, তিতির ডাটা, তিতা ডাটা নামেও ডাকা হয়। এর আদি নিবাস ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ, ব্রাজিল, মায়ানমার, শ্রীলংকা ইত্যাদি।

পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞানীদের মতে, হেলেঞ্চাতে ২.৯ শতাংশ আমিষ, ০.২ শতাংশ চর্বি, ৫.৫ শতাংশ শর্করা এবং ২.২ শতাংশ লবণ রয়েছে। এছাড়া এতে প্রচুর ভিটামিন-এ আছে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, হেলেঞ্চা ভেষজ চিকিৎসায় কোষ্ঠকাঠিন্য, হাঁপানি, স্নায়ুরোগ, বাতের ব্যথা, ঘামাচি, হাত-পা জ্বালা ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেও এর অনেক গুণ পাওয়া গেছে; যেমন- এন্টি অক্সিডেন্ট, জীবাণু নাশক, ব্যথা নাশক, ডায়রিয়া হ্রাস, স্নায়ু উত্তেজনা প্রশমন ইত্যাদি।

চলুন হেলেঞ্চা শাকের ওষধি গুণ সম্পর্কে জেনে নিই-

পাঁচড়া ও চুলকানি
শীত ও বর্ষাকালে পাঁচড়া ও চুলকানি রোগ মানুষের খুবই কষ্টদায়ক। হেলেঞ্চা শাকের ৩/৪ চামচ রস সকালে একবার করে কয়েক দিন নিয়মিত খেলে এ রোগ থেকে উপকার পাওয়া যায়।

ঘামাচি ও ফুসকুড়ি
গায়ে কাঁটা বা ঘামাচি, প্রথমটি শীতে এবং দ্বিতীয়টি গরমকালে মানুষের জন্য খুবই কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়ায়। উভয় রোগের জন্য হেলেঞ্চা পাতা সামান্য পানি দিয়ে বেটে তার রস সারা শরীরে মাখলে খুব দ্রুতই উপকার পাওয়া যায়।

বসন্ত রোগের আক্রমণে
শরীরে দু’একটি গুটি দেখা দেয়া মাত্রই অর্থাৎ রোগের প্রথম অবস্থায় শ্বেতচন্দন গুঁড়ো দেড় থেকে দুই গ্রাম এবং হেলেঞ্চা শাকের রস আধা কাপ ভালোভাবে মিশিয়ে খেলে শীঘ্রই গুটি বের হয়ে যায়।

যকৃৎ দুর্বল হলে
যকৃৎ অর্থাৎ লিভার দুর্বল হলে শরীরে নানা ধরনের রোগ দেয়া দেয়। ১০০ গ্রাম হেলেঞ্চা শাক ছোট ছোট করে কেটে, ১৫০ মিলিলিটার পানিতে পরিমাণ মতো লবণ মিশিয়ে সিদ্ধ করতে হবে। পানি ফুটে এক কাপ পরিমাণ হলে পাত্রটি আচ থেকে নামিয়ে ফেলতে হবে। ঠাণ্ডা হলে ভাত খাবার আগে ৪/৬ ফোঁটা সরষে তেল মিশিয়ে খেলে যকৃৎ সবল হয়। অবস্থা বুঝে ২ থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়মিত খাওয়া দরকার।

পিত্ত বাড়লে
হেলেঞ্চার পাতা বেটে তার ৩০ মিলিলিটার রস এবং গরু কিংবা ছাগলের দুধ (অবশ্যই গরম করে এবং ঠাণ্ডা অবস্থায়) ৫০মিলিলিটার এ দু’টি একসঙ্গে মিশিয়ে রোজ খেলে শরীরে পিত্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হবে।

কোমরের যন্ত্রণা
কোমরের ঠিক নীচে ব্যথা বা যন্ত্রণা, পায়ের পেশীতে রাতের দিকে টান ধরে, এসব ক্ষেত্রে ৩ চামচ হেলেঞ্চার শাকের রস, হাল্কা গরম করে সকালের দিকে খালিপেটে খেলে ভালো হয়ে যায়। নিয়মিত বেশ কিছুদিন খেলে আরও ভালো।

রক্ত দূষিত হলে
২০ মিলিলিটার হেলেঞ্চার শাকের পাতা ও ডাঁটা বাটা রস, এক চামচ চিনির সঙ্গে মিশিয়ে সকালে একবার করে খেলে দূষিত রক্ত পরিষ্কার হয়ে যায়। আবার অনেকের জিহ্বায় মোটা সাদা প্রলেপ পড়ে। ফলে অরুচি হয়। তারা কয়েক দিন হেলেঞ্চার রস গরম করে খান, অরুচি চলে যাবে।

এছাড়া যারা নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন, তারা হেলেঞ্চার পাতার রস দুই চামচ, কলমি পাতার রস দুই চামচ, দুই চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে এক মাস রোজ সকালে খান, নিম্ন রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: