কিশোর আলোর অনুষ্ঠানে নিহত রাহাতের মৃত্যুতে তদন্ত কমিটি

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যুতে একটি তদন্ত কমিটি করেছে ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার বিকালে কলেজ ক্যাম্পাসে দৈনিক প্রথম আলোর সাময়িকী কিশোর আলোর একটি অনুষ্ঠান চলাকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার (১৫)।

কলেজটির অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম আহমেদ বলেন, ‘নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যুর ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’

কলেজের দিবা শাখার ছাত্র রাহাতের বাড়ি নোয়াখালী। ঢাকার আগারগাঁওয়ে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি।

পরিবারের আবেদনে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান মোহাম্মদপুর থানার ওসি জিজি বিশ্বাস।

তিনি বলেন, ‘কি আনন্দ’ শিরোনামেও ওই অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করা মঞ্চের পেছনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন রাহাত। আয়োজকরা তাকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের একজন শিক্ষক বলেন, ‘আয়োজকরা তাকে কাছের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে না নিয়ে মহাখালীর আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ওই অনুষ্ঠান আয়োজনের অংশীদার ছিল বলে জানান তিনি।

রাহাতের মারা যাওয়ার ঘটনায় আয়োজকদের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণেই আবরারকে মারা যেতে হয়েছে।

শনিবার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তারা রাহাতের মৃত্যুর ঘটনায় সিসিটিভির ফুটেজ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরবরাহসহ প্রথম আলোর আছে চার দফা দাবি তুলেছে। ফেসবুকে একটা ইভেন্ট খুলে তারা এসব দাবি জানিয়েছে।

কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হকের বক্তব্য

শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ফেসবুকে এ দুর্ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে আনিসুল হক লিখেছেন-

নাইমুল আবরারের আব্বা-আম্মা এবং শোকার্ত পরিবারের সঙ্গে এতক্ষণ হাসপাতালে ছিলাম। এই মাত্র ফিরলাম। হাসপাতালে শোকার্ত পরিবারের সামনে বসে আমি স্ট্যাটাস লেখার মতো অবস্থায় ছিলাম না। যা লিখেছি, তাতে বারবার ভুল হচ্ছিল, বানান ভুলও ছিল।

কিশোর আলোর অনুষ্ঠানে এসে আববার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এবং হাসপাতালে নেবার পর ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন, আমার জন্যে এর চেয়ে শোক, দুঃখ, পরিতাপের বিষয় আর নেই। নাইমুল আববার ঢাকা রেসিডেনসিয়ালের ক্লাস নাইনের ছাত্র ছিল। ভালো ছাত্র ছিল। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল।

তারা দুই ভাই। বড়ভাই প্রকৌশলী, জার্মানিতে থাকেন। নাইমুল আবরারের আব্বা আগে সৌদি আরবে থাকতেন।

এখন ফেসবুকে কতগুলো প্রচারণা দেখছি। আমি আমার জানা দেখা কথাগুলো বলি। আমাকে চারটার পর জানানো হয়, একজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। আরো খানিক পরে জানানো হয়, আহত ভদ্রলোক সম্ভবত চট্টগ্রাম থেকে আসা। অনুষ্ঠান শেষ হয় ৪টা ৪০ কি ৪টা ৪৫ মিনিটে। পাঁচটার পর আমি জানতে পারি, আহত জন মারা গেছেন। মানে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার ১৫/২০ মিনিট পরে মৃত্যুর খবর আমি পাই। তারও আধ ঘণ্টা পর আমাকে জানানো হয়, যিনি মারা গেছেন, তিনি রেসিডেনসিয়ালের ক্লাস নাইনের ছাত্র।

কাজেই যারা বলছেন, নাইমুল আবরার মারা যাওয়ার খবর গোপন করে অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়া হয়েছে, তারা ঠিক বলছেন না। শেষ শিল্পী অর্ণব ওঠার আগে দুর্ঘটনা সম্ভবত ঘটেনি। সম্ভবত বলছি, কারণ একেকজন একেকটা কথা বলছেন।

দ্বিতীয়ত, ইউনিভার্সাল হাসপাতাল আমাদের স্পন্সর নয়। তারা আমাদেরকে জরুরি মেডিকেল সার্ভিস দেবার জন্য ওখানে ছিলেন। দুজন এফসিপিএস ডাক্তার ছিলেন। একটা অ্যাম্বুলেন্স রেডি করা ছিল। সেই অ্যাম্বুলেন্সেই নাইমুল আববারকে হাসপাতালে নেয়া হয়। কেন তাকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেয়া হলো না, এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য আমার জানা নেই।

তবে আমরা যে মেডিকাল ক্যাম্প, টিম, অ্যাম্বুলেন্স রেডি রেখেছিলাম, সেটা ভালোর জন্য। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তা থাকা সত্ত্বেও নাইমুল আববার আমাদের ছেড়ে চলে গেল।

 

টাইমস/এসআই

 

Share this news on: