বাদ পড়লেন শাজাহান খান

দেশের ৪৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন বিগত মন্ত্রিসভায় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা শাজাহান খান। নতুন মন্ত্রিসভার এই মন্ত্রণালয়ে কোনো মন্ত্রী না রেখে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দিনাজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে।

রোববার বিকেলে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সোমবার মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছেন ৪৬ জন সাংসদ। এর মধ্যে মন্ত্রী হিসেবে ২৪ জন, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ১৯ জন এবং ৩ উপমন্ত্রী জন। তবে এদের মধ্যে পুরোনো ৩৬ জনই বাদ পড়েছন। বাদ পড়েছেন িবহুল আলোচিত নৌ- পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানও।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শাজাহান খান মাদারীপুর-২ আসন থেকে সপ্তমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এরমধ্যে ২০০৯ সাল থেকে টানা দুই মেয়াদে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন তিনি। নৌমন্ত্রী শাজাহান খান সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মন্তব্য করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। তার মন্তব্য নিয়ে আলোচনার চেয়ে সমালোচনাই ছিল বেশি। সারাদেশে পরিবহন খাতে একের পর এক নৈরাজ্যের পরও বারবার পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষ নেয়ায় তিনি সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত হয়েছেন। নানা ইস্যুতে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আলোচিত-সমালোচিত শাজাহান খানের পদত্যাগেরও দাবি ওঠে একসময়।

গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর বাস চাপায় দুজন প্রাণ হারায়, আহত হয় আরও বেশ কয়েকজন। ওই ঘটনা পর হাসিমুখে বিতর্কিত বক্তব্য দেয়ায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। যে কারণে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দাবিতে রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা।

২৯ জুলাই ২০১৮ রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনা প্রসঙ্গে শাজাহান খান বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রতি ঘণ্টায় ১৬ জন দুর্ঘটনায় মারা যায়। সেখানে এত আলোচনা হয় না, শুধু বাংলাদেশেই হচ্ছে। আমি মনে করি যে যতটুকু অপরাধ করবে, সে ততটুকু শাস্তি পাবে এবং যে শাস্তি পাবে সেই শাস্তি নিয়ে বিরোধিতা করার কোনো সুযোগ নেই।

৪ মে ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধে শুধু চালকদের সচেতন হলে চলবে না, চালকের পাশাপাশি যাত্রী ও পথচারীকে সচেতন হতে হবে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কেবলমাত্র চালকদের দোষী বলা ঠিক নয়। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যাত্রীদেরও খামখেয়ালিপনা থাকে’ বলেন শাজাহান খান।

গত বছরের ১ মে শাজাহান খান বলেন, উপমহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশে দুর্ঘটনা কম ঘটে। বিভিন্ন স্থানে রাস্তার বাঁকগুলো সরলীকরণ, ফুটওভার ব্রিজ, পাতালপথ নির্মাণের ফলে দুর্ঘটনা অনেকটা কমে এসেছে বলেও বিতর্কিত মন্তব্য করেন তিনি।

গত বছরের ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে শাজাহান খান বলেন, দুর্ঘটনার জন্য চালকদের সাজা বাড়ানো হলে দুর্ঘটনা কমবে না।

২০১৭ সালের ১ মার্চ তিনি বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়ে চালকদের পক্ষে সাফাই গেয়ে, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারেন। এটাকে ধর্মঘট নয় ‘স্বেচ্ছায় অবসর’ বলা যেতে পারে। সমাধান হবে, তবে সময় লাগবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাসচালক নেতারা কোনো নির্দেশনা মানতে চাইছেন না। চালকেরা মনে করেছেন, তারা মৃত্যুদণ্ডাদেশ বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশের মতো রায় মাথায় নিয়ে গাড়ি চালাবেন না। তাই তারা স্বেচ্ছায় গাড়ি চালাচ্ছেন না। এটাকে ধর্মঘট নয় ‘স্বেচ্ছায় অবসর’ বলা যেতে পারে।

২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শাজাহান খান বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে প্রথমে ৩০৪ ধারায় মামলা নিতে হবে। পরে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়, তবেই ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা নেয়া যাবে।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে যৌথসভায় এ কথা বলেন তিনি।

এছাড়া ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় আহতদের দেখতে গিয়ে শাহজাহান খান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকেরা দায়ী নন। অবৈধভাবে লাইসেন্স নেয়া অদক্ষ চালকদের কারণে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় বহু হতাহতের বিষয় নিয়ে যখন দেশবাসী ক্ষুব্ধ, তখন মন্ত্রী এ মন্তব্য করে বসেন।

এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন তিনি।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: