বাবা হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন নির্বাচনী সংহিসতায় নিহত মো. মিলন মিয়ার সন্তানরা। বাংলাদেশ টাইমসের কাছে একান্ত আলাপচারিতায় তারা এ দাবির কথা জানায়।
নিহত মো. মিলন মিয়া নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের বংপুর গ্রামের হযরত আলীর ছেলে। তিনি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে তিনি নিহত হন। পরে তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে দাফন করা হয়।
নিহত মিলন মিয়ার তিন সন্তান রয়েছে। তাদের মধ্যে দুইজন ছেলে ও একজন মেয়ে সন্তান। তাঁর বড় ছেলে সোহেল মিয়া অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে ঝড়ে পড়ে। তবে মেয়ে সুমা বেগম এবার অষ্টম শ্রেণিতে ও ছোট ছেলে সাকিব মিয়া এবার তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করছেন।
বুধবার দুপুরে নিজ বাড়িতে কথা হয় তাদের সাথে। এ সময় কান্না জড়িত কণ্ঠে সোহেল মিয়া বলেন, ‘আমরা তিন ভাই-বোন। আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন বাবা। কিন্তু তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ওই হত্যাকারীদের বিচার চাই।‘
১৩ বছরের মেয়ে সুমা বেগম বলেন, ‘ভোটের দিন ভোরে আমাদের ঘুমে রেখে বাবা ভোটকেন্দ্রে চলে গেছেন। তবে যাওয়ার আগের রাত সবাইকে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার কথা বলে গেছেন। কিন্তু কি অপরাধে আমার বাবাকে খুন করা হয়েছে তা আমি জানি না।‘
বাবা আদারের কথা স্মৃতিচারণ করে সুমা বলেন, ‘আমার বাবার সবচেয়ে বেশি আমাকে আদর করতেন। আমি আমার বাবার কথ বুলতে পারছি না।‘
এক পর্যায়ে কান্না করতে করতে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন কোথায় যাব? কি করব?‘
এ ঘটনায় জড়িতদের চিহিৃত করে তাদের বিচার দাবি করে সুমা বলেন, ‘আমার বাবাকে যারা খুন করেছে, তাদের ফাঁসি দিতে হবে।‘
সোহেল ও সুমা বিচার দাবি করলেও ছোট থেকে শোকে কাতর হয়ে বাবার একটি ছবি হাতে নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় বসে থাকতে দেখা গেছে। তবে নিহত মিলনের স্ত্রী পারভীন বেগম জানান, নিহতের ঘটনার পর থেকেই তার অবুঝ ছেলে সাকিব কারো সাথে তেমন কোনো কথা বলছে না। সে সব সময় একা একা বাড়ির আঙ্গিনায় বসে থাকে। এছাড়াও কখনো কখনো তার বাবার সন্ধানে ছুটাছুটি শুরু করে।
সন্তানদের মত তিনিও তার স্বামীর বিচার দাবি করে বলেন, ‘আমার স্বামীকে যারা খুন করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমার স্বামী কোনো দোষ করে নাই। তার একটাই দোষ ছিল, সে নৌকা প্রতীকের এজেন্ট হয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ছিল।‘
উল্লেখ্য, গত রোববার বিকেলে নরসিংদী -৩ (শিবপুর) আসেনের কুন্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী জহিরুল হক ভূঞা মোহন ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় মো. মিলন মিয়াকে হত্যা করা হয়। পরে পুলিশে ওই ভোট কেন্দ্রের বাহিরে থেকে গলাকাটা অবস্থায় মিলন মিয়ার লাশ উদ্ধার করে।
এদিকে, এ ঘটনায় মিলনের স্ত্রী পারভীন বেগম বাদি হয়ে গত বুধবার রাতে শিবপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় নরসিংদী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লাসহ মোট আট জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় আরো ১৫/২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
তবে মামলায় পরিকল্পিভাবে তার নাম দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত এ মামলায় আমাকে এবং আমার পরিবারকে জড়ানো হয়েছে। এ হত্যা একটি পরিকল্পিত হত্যা। প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেরাই এ হত্যার ঘটনা ঘটিয়ে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করে আমার বিজয়কে ছিনিয়ে নেয়।
এ সম্পর্কে আরও জানতে পড়ুন...
টাইমস/ কেআরএস/এইচইউ