দ্য ম্যাশ: এ জাদুর ঘোর যেন না কাটে

দ্য ম্যাশ! যাকে বলা হয় নড়াইল এক্সপ্রেস। বিশ্ব ক্রিকেটের গতির সম্রাট পাকিস্তানি শোয়েব আকতারকে বলা হতো রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস। ওই নাম ধরে শোয়েব আকতারকে বারবার সম্বোধন করছিলেন ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজা। ২০০৩ সালের ঘটনা। পাকিস্তান-বাংলাদেশের ম্যাচ চলাকালীন বাংলাদেশী ধারাভাষ্যকার আতাহার আলী খানও মাশরাফির নামের সঙ্গে জুড়ে দিলেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। কারণ সে সময় মাশরাফিই ছিলেন বাংলাদেশের গতির সম্রাট।

বাংলাদেশ দলে এই মাশরাফির অবদান যে কতটুকু তা বলে শেষ করা যাবে না। মি. ক্যাপ্টেন খ্যাত সফল ক্রিকেটার মাশরাফি দেশপ্রেমের এক উজ্জলতম উদাহরণ। বহুবার যেই মানুষটি নিজের শরীরী বাধাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ২২ গজের যুদ্ধে নেমেছেন দেশের জন্য। জয় করেছেন যুদ্ধ। তিনিই মাশরাফি। ভাবছেন এত কিছু কেন লেখা? আসলেই তো তাই, মাশরাফিকে কে না জানে?

তারপরও মনে করি, মাশরাফির কিছু অর্জন না লিখলেই নয়। যা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল:

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচের মধ্য দিয়ে অধিনায়কত্বের পরিসমাপ্তি টানছেন মি. ক্যাপ্টেন। শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামেই মাশরাফি শেষ বারের মত টস কয়েন ছুঁয়ে দেখবেন। কারণ বৃহস্পতিবার তিনি সংবাদ সম্মেলন করে অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে টানা ৬ বছর (সবচেয়ে বেশি সময়) টাইগারদের নেতৃত্বের ইতি টানলেন নড়াইল এক্সপ্রেস। তবে অধিনায়কত্ব ছাড়লেও তিনি এখনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ছেন না। প্রাণের খেলাটি তিনি চালিয়ে যেতে চান।

বাংলাদেশের হয়ে ২০১০ সালে ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে প্রথম দায়িত্ব নেন মাশরাফি। তবে লম্বা ইনজুরির কারণে দল থেকে ছিটকে যাওয়ায় অধিনায়কত্ব হারান তিনি। এরপর ফের পুরোদমে টাইগারদের দায়িত্ব বুঝে নেন ডানহাতি পেসার। এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই অধিনায়কত্বের পথচলা শুরু হয় তার। আবার সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই তিনি শেষ বারের মত টস কয়েন আকাশে ঘুরাবেন।

অধিনায়কত্ব ছাড়লেও বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মাশরাফি ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন। তার ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের ছোঁয়ায় বদলে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। দেশ-বিদেশে জিততে শিখেছে বাংলাদেশ। বড় বড় ইভেন্টগুলোতে দম ফাটানো উত্তাপ ছড়াতে শিখেছে বাংলার টাইগাররা। কারণ মাশরাফির উৎসাহ আর সাহসী উদ্দীপনায় ভর করেই দলের সব সদস্য এখন তরতাজা টাইগার। তারা ভয়কে জয় করতে শিখেছেন।

মাশরাফির নেতৃত্বে মোট ৮৭টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। তার মধ্যে ৪৯টিতে জয় পেয়েছে টাইগাররা। তাই অধিনায়ক হিসেবে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের হয়ে সর্বোচ্চ ওডিআই ম্যাচ জয়ের রেকর্ডটাও মাশরাফির।

এছাড়া মাশরাফির অধিনায়কত্বে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল (২০১৫) খেলে বাংলাদেশ। পাশাপাশি ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালেও উঠে যায় লাল-সবুজের জার্সিধারীরা।

এমনকি ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মত ক্রিকেট পরাশক্তির বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের রেকর্ড এই ম্যাশের নেতৃত্বেই এসেছে। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে এক নতুন উদ্যম প্রতিষ্ঠা করেছেন সংসদ সদস্য মাশরাফি।

কিন্তু আজ হয়তো ক্ষণে ক্ষণে বেলা গড়িয়েছে বেশ। সময় হয়েছে বিদায় নেবার। হয়তো সময় হয়নি মাঠ ছেড়ে ঘরে ফেরার। তবুও ফিরতে হবে, ছেড়ে দিতে হবে স্থান। কারণ আজ বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, মাশরাফি হারিয়ে যাবে না। ফুরিয়ে যাবে না তার ধার। পথ হারাবে না নড়াইল এক্সপ্রেস। মাশরফির নেতৃত্বের যে জাদু, সে জাদুর ঘোর যেন আজীবন থাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে এই প্রত্যাশা আমাদের।

 

টাইমস/এসএন/এইচইউ

Share this news on: