পর্যটক আকষর্ণে নেই পর্যাপ্ত ‘আয়োজন’

সমুদ্রের তলদেশে সাঁতার কাটছে মানুষ। নানান প্রজাতির মাছের সাথে হচ্ছে দেখা। সমুদ্রের গভীরে রঙবেরঙের উদ্ভিদ দেখে মনে হচ্ছে এ এক অন্য জগৎ! নীল জলরাশির এই জগতের দেখা পেতে স্কুবা ড্রাইভিং-এ নামেন পর্যটকরা। স্পিডবোটে প্যারাসেইল আর আরোহীদের একটি শক্ত দঁড়ি দিয়ে বেঁধে উড়িয়ে দেওয়া হয় প্যারাসাইলিং। স্পিডবোট আরোহীকে টেনে নিয়ে উড়তে থাকে ঠিক পাখির মতোই। উঁচুতে হাওয়ায় ভেসে সাগর, পাহাড় ও সবুজের সৌন্দর্য উপভোগ করে উচ্ছ্বসিত পর্যটকরা। বাংলাদেশের পর্যটন এলাকার মধ্যে কেবল কক্সবাজারেই দেখা মিলে এমন চিত্রের। স্কুবা ড্রাইভিং ও প্যারাসাইলিং বাংলাদেশের পর্যটনে নতুন সংযোজন হলেও সরকারী উদ্যোগে নেই।

পর্যটনে বাঙ্গি জাম্পিং বেশ জনপ্রিয়। দেশের পাহাড়ী অঞ্চলে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভ্রমন করলেও বাংলাদেশে বাঙ্গি জাম্পিংয়ের আয়োজন নেই। এই রাইডে চড়তে বাংলাদেশের পর্যটকরা চলে যান পাশ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল কিংবা থাইল্যান্ড। কাইট সারফিং, রাফটিং, হ্যাং গ্লাইডিং, সারফিং, ক্যানোয়িং, হর্স রেইস তো ইউরোপ-আমেরিকার রাইড হিসেবেই পরিচিত। বাংলাদেশের পর্যটনে এমন কিছু আয়োজনের চিন্তাও যেন কেউ করে না।

বিচ ফুটবল, বিচ ভলিবল, কাইট এন্ড ফানুস ফেস্টিভাল, প্যারাগ্লাইডিং, ওয়াইন্ড সার্পিং সহ পর্যটনের অনেক ইভেন্ট ও রাইড আয়োজন করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করছে।

বাংলাদেশ একটি পর্যটন সমৃদ্ধ দেশ হলেও এই খাতকে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন হিসেবে কাজে লাগানো যায়নি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করছে, তবুও নির্দিষ্ট খাত ছাড়া আয় হচ্ছে না এই খাতে। বাংলাদেশে পর্যটন বলতে হোটেল-মোটেল, রেঁস্তোরা আর পরিবহন ব্যবসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। পর্যটকদের আকর্ষণে বাড়তি ইভেন্ট/আয়োজন না থাকায় এই খাতে ব্যাপক অর্থ আয়ের দ্বারও খুলছে না।


বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার থাকা সত্ত্বেও পর্যটকদের আকর্ষনে সমুদ্রকে ঘিরে আয়োজন নেই বললেই চলে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনকুবেররা বছরের একটা সময় প্রাইভেট জাহাজ নিয়ে সাগরে অবকাশ যাপনে বের হন। দেশী বা বিদেশী পর্যটকরা প্রাইভেট জাহাজে করে সমুদ্রর কিছু দূর গিয়ে অবকাশ যাপনের চিন্তা করলেও সেই আয়োজন নেই আমাদের। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি পর্যটনের উপর দাঁড়িয়ে আছে। যেখানে পর্যটক আকষর্ণে থাকে নানান আয়োজন ও ইভেন্ট।

বাংলাদেশি পরিব্রাজক এলিজা বিনতে এলাহী বলেন, পর্যটন খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রচলিত পর্যটনের বাইরে নতুন নতুন স্পট তৈরির চেষ্টা করেছে। সেই সঙ্গে দেশীয় পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশিদের আকর্ষণ করতে নানা উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। তবে করোনাকালে হঠাৎ করেই উদ্যোগে ভাটা পড়ে। একটি দেশের সামগ্রিক ট্যুরিজমকে প্রচার-প্রচারণায় আনার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা ট্যুরিজম, ব্যবসা ট্যুরিজম, ধর্ম ট্যুরিজম, হেরিটেজ ট্যুরিজম নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে কাজ করতে হবে। ইউরোপের দেশগুলোতে ট্যুরিজমকে জনপ্রিয় করার জন্য বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজন করে থাকে। শুধু ইউরোপ কেন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারত দেশের ট্যুরিজমেও পর্যটকদের আকর্ষণে নানান ইভেন্ট রাখা হয়। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও নেপালে গেলে পর্যটকরা বিশেষ করে প্যারাগ্লাইডিং ও বাঙ্গি জাম্পিং-এ অংশ নেয়। আবার মালদ্বীপ জনপ্রিয় স্কুবা ড্রাইভিং-এর জন্য। কিন্তু আমাদের দেশে পর্যটনের অবাধ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পর্যটকদের জন্য আয়োজন খুবই কম।

ইন্টেলিজেন্স ট্যুরিস্ট এইডের সিইও জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা শুরু থেকেই দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশী পর্যটকদের বাংলাদেশে নিয়ে আসার বিষয়ে কাজ করছি। বিদেশীদের আগ্রহ আছে বাংলাদেশ নিয়ে। কিন্তু তারা পর্যটনের জন্য যে সব সুযোগ সুবিধা চায়, সেগুলো আমরা দিতে পারি না। সমুদ্র বা পাহাড়ী অঞ্চলে এডভাঞ্চারের মতো তেমন কোনো রাইড-ই আমাদের নেই।

পর্যটকদের চাহিদার বিষয়ে তিনি বলেন, পর্যটকরা চায় তাদের নিজেদেও মতো করে সময় কাটাতে। আামাদের সমুদ্র সম্পদকে ব্যবহার করে আমরা পর্যটন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করার সুযোগ রয়েছে। পাহাড়েও কাজ করার সুযোগ আছে। পর্যটনের উন্নয়নের জন্য পর্যটকবান্ধব পরিকল্পনা নিতে হবে। সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসলে আমরা বাংলাদেশকে আরও আকর্ষণীয়ভাবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারবো।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রণোদনায় দুই হাজার কোটি টাকা ছাড় Oct 05, 2025
img
লিথুয়ানিয়ার আকাশে রহস্যজনক বেলুন, বন্ধ রাজধানীর আকাশসীমা Oct 05, 2025
img
রামগঞ্জে বালু উত্তোলন নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ Oct 05, 2025
img
সাঘাটার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার Oct 05, 2025
img
সঞ্জয়ের বিতর্কিত জীবন থেকে দূরে থাকতেই প্রেম ভাঙেন মাধুরী! Oct 05, 2025
img
হামাস সম্মতি দিলেই সঙ্গে সঙ্গে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর: ট্রাম্প Oct 05, 2025
img
বায়ুদূষণের শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার অবস্থানে কিছুটা উন্নতি Oct 05, 2025
img
দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারে নাগরিকদের উৎসাহ দিচ্ছে মোদি সরকার Oct 05, 2025
img
মেসির ‘অ্যাসিস্ট হ্যাটট্রিকে’ মায়ামির জয়, এলিট ক্লাবে এলএমটেন Oct 05, 2025
img
৩৫ ছক্কা ও ১৪ চারে মাত্র ১৪১ বলেই হারজাসের ৩১৪ রান Oct 05, 2025
img
বিক্ষোভে উত্তাল জর্জিয়া, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢোকার চেষ্টা জনতার Oct 05, 2025
img
টাইটানিক খ্যাত 'কেট উইন্সলেট'র জন্মদিন আজ Oct 05, 2025
img
খুলনায় পিকআপের ধাক্কায় নিহত ১ Oct 05, 2025
img
ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম বিভাগের সঙ্গে কাজ করবে গুগল-ইউটিউব Oct 05, 2025
img
আফগান মন্ত্রীর ভারত সফর ঘিরে কূটনৈতিক মহলে কৌতূহল Oct 05, 2025
img
চানখারপুলের ঘটনায় হাবিবুরসহ ৮ আসামির বিরুদ্ধে নবম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ Oct 05, 2025
img
ইন্দোনেশিয়ায় মাদ্রাসা ভবন ধসে নিহত ৩৭ Oct 05, 2025
img
ডিএমপির বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৪ Oct 05, 2025
img
গম্ভীরের সিদ্ধান্তেই অধিনায়কত্ব হারালেন রোহিত শর্মা! Oct 05, 2025
img
দলগুলোর সঙ্গে আজ আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন Oct 05, 2025