লকডাউনে ‘বৈশাখী ইলিশ’ আনতে ট্রেনে চাঁদপুর গেল ২৫ কর্মকর্তা

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জন্য ‘বৈশাখের ইলিশ’ আনতে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত লকডাউন ভেঙ্গে একটি স্পেশাল ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর গিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ট্রেনে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তাসহ মোট ২৫ রেল কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন বলে জানা গেছে।

রেলওয়ের বাণিজ্যিক ও পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রেলমন্ত্রীর নির্দেশে ১৩ এপ্রিল বিভিন্ন স্টেশনে জরুরি ভিত্তিতে বেতন ও রেলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন ভাতা দিতে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে একটি স্পেশাল ট্রেন ছেড়ে যায়।

ট্রেনে থাকা একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন, করোনা মোকাবিলায় দেশে লকডাউন চলছে। এর মধ্যেও বেতন, পেনশনের টাকা দিতে গিয়েছি। তবে ডিআরএম (বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার) এর জন্য ইলিশ মাছ আনতে চাঁদপুর স্টেশনে পাঠানোটা সত্যিই কষ্টের।

জানা গেছে, ১৩ এপ্রিল সকালে ট্রেনটি চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে প্রথমে ফেনী স্টেশন মাস্টারকে টাকা দেয়। এরপর লাঙ্গলকোট হয়ে লাকসাম গিয়ে লাকসামের স্টেশন মাস্টারকে টাকা দেয়া হয়। এই সময় লাকসামের স্টেশন মাস্টার ট্রেন আবার উল্টো পথে চাঁদপুর না যাওয়ার জন্য চাঁদপুর স্টেশন মাস্টারের টাকাটা তাকে দিয়ে যেতে বলেন। তিনি পরদিন চাঁদপুরের স্টেশন মাস্টারের কাছে টাকা পৌঁছে দেবেন বলে জানান। পরে ট্রেনটি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, ট্রেনটি সন্ধ্যা ৭টায় লাকসাম আসলে ডিআরএম সাদেকুর রহমান ট্রেনটি যে কোনোভাবে চাঁদপুর যাওয়ার নির্দেশ দেন। চাঁদপুরের বিষয়টি সমন্বয় করার পরও সেখানে যেতে বাধ্য হওয়ায় ট্রেনে থাকা প্রায় সবাই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ দেখান। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে বাধ্য হয়ে ট্রেনটি চাঁদপুর নিয়ে যান চালক বখতিয়ার। পথিমধ্যে লাকসাম স্টেশন থেকে চাঁদপুরের টাকাও নেয়া হয়। ট্রেন চাঁদপুরে পৌঁছে স্টেশন মাস্টারকে টাকাগুলো বুঝিয়ে দেয়া হয়।

এ সময় চাঁদপুর স্টেশনের টিটিই মহিউদ্দীন এসে বলেন ট্রেন এখন যাবে না। এই ট্রেনে করে ডিআরএম স্যারের ইলিশ মাছ যাবে। গাড়ি কিছুক্ষণ থামান। এরপর বৈশাখী ইলিশ মাছ তোলার জন্য চাঁদপুর স্টেশনে প্রায় ৪০ মিনিট গাড়ি অপেক্ষায় থাকে। এরপর টিটিই মহিউদ্দিন ২৫ কেজির মতো ইলিশ মাছ ইঞ্জিন রুমে তুলে দেয়। তখন রাত সাড়ে ৯টা। পরবর্তীতে পুনরায় লাকসাম হয়ে ট্রেনটি রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রাম পৌঁছায়।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে জিআরপি ও আরএনবির দুই কর্মকর্তা বলেন, ‘কুমিল্লা, লাকসাম, চাঁদপুরও লকডাউন চলছে। এর মধ্যে সরকারি নির্দেশনায় ডিউটি করতে গেছি। কিন্তু সামান্য কিছুর জন্য ২৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অপ্রয়োজনে চাঁদপুর যেতে হয়েছে। যেটা সত্যিই দুঃখজনক। আমাদেরও পরিবার-পরিজন আছে। এ ঘটনা সত্যি আমাদের ব্যথিত করেছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক’।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আনসার আলী বলেন, ট্রেনে করে ইলিশ মাছ আনার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে ফোনে ডিআরএম স্যার আমাকে ট্রেন অবশ্যই যাতে চাঁদপুর যায়, সে বিষয়ে বলেছিলেন।’

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) সাদেকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ধারাবাহিক ভাবে ৮ টি স্টেশনে বেতন ও পেনশনের টাকা দিতে গিয়েছিলেন। কোনো মাছের চালান আনতে নয়।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: