বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র, নয় অঙ্গরাজ্যে কারফিউ

শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার হাতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক খুনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলমান বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়েছে। এরই মধ্যে দেশটির বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে কারফিউ জারি করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও বিক্ষোভকারীদের নিবৃত করা যাচ্ছে না। এমন পরিস্তিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৯টি অঙ্গরাজ্যে সেনা মোতায়েনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যশ সিএনএন জানিয়েছে, শনিবার হোয়াইট হাউসের সামনে টিয়ার গ্যাস ও পিপার স্প্রে উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীদেরকে পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

এরই মধ্যে বিক্ষোভ দমাতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বেভার্লি হিলস, লস অ্যাঞ্জেলেস, কলোরাডোর ডেনভার, ফ্লোরিডার মায়ামি, জর্জিয়ার আটলান্টা, ইলিনোইরের শিকাগো, কেনটাকির লৌইসিভিল, মিনেসোটার মিনেপোলিস, সেন্ট পল, ওহিয়োর সিনসিনাটি, ক্লেভারল্যান্ড, কলোম্বাস, ডায়টন, টলেডো, ওরিগন ইউজিন, পোর্টল্যান্ড, পেনিসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া, পিটসবার্গ, টেনেসির ন্যাশভিল, উথার সল্টলেক সিটি, ওয়াশিংটনের সিটেল, উইসকোনসিনের মিলওয়াউকি শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ভাবেই এসব অঞ্চলে বিক্ষোভ দমন করা যাচ্ছে না।

সিএনএন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের মুখে মাস্ক নেই। এমনকি তারা সামাজিক দুরত্বও মানছেন না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে দেশের আটটি অঙ্গরাজ্যে সেনা ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত আমেরিকান ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের চিন্তা-ভাবনা চলছে। এছাড়া মিনেসোটা, জর্জিয়া, ওহাইয়ো, কলোরাডো, উইসকনসিন, কেনটাকি, উটাহ ও টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের কোথাও কোথাও এরইমধ্যে আমেরিকান ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা মাঠে নেমেছে।

এদিকে শনিবার বিক্ষোভকারীরা দ্বিতীয় দিনের মতো হোয়াইট হাউসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এসময় তারা হোয়াইট হাউসের উল্টো পাশে অবস্থিত লাফায়েত্তে পার্কের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাঙার চেষ্টা চালায়।

এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিক্ষোভকারীদের ওপর পিপার স্প্রে, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। বিক্ষুব্ধরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে বোতলসহ বিভিন্ন বস্ত নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে সন্ধ্যার দিকে একটি ভাগাড়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।

এর আগে, বিক্ষোভকারীদের কাউকে কাউকে সিক্রেট সার্ভিসের গাড়ির ওপরে এবং আইসেনহোয়ার এক্সিকিউটিভ অফিস ভবন সংলগ্ন নিরাপত্তা বুথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সন্ধ্যা ৬টা বাজার আগ মুহূর্তে পুলিশ তাদেরকে রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার হুশিয়ারি দিতে থাকে। ওই সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলেও ব্যর্থ হয়।

পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিক্ষোভকারীরা লাফায়েত্তে পার্কের বিপরীত পাশে অবস্থান নিয়ে সিক্রেট সার্ভিস ও পার্ক পুলিশের সদস্যদের লক্ষ্য করে গালি ও স্লোগান দিতে থাকে। ওই সময় বেষ্টনীগুলোকে আরও শক্তভাবে আটকে রেখে বিক্ষোভকারীদের ওপর পিপা স্প্রে ছুড়তে থাকে পুলিশ। পিপার স্প্রেতে ভারি হয়ে ওঠে হোয়াইট হাউসের বাতাস।

এদিকে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘ভয়ানক ব্যাপার’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। নিহত আফ্রিকান-আমেরিকানের পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের কাছে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা ফ্লয়েডের ছবি হাতে বিক্ষোভ দেখান ও ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ স্লোগান দেন। এ প্রতিবাদ কর্মসূচির সময় হোয়াইট হাউস অস্থায়ীভাবে লকডাউন করে দেয়া হয়। তবে ট্রাম্প আন্দোলনকারীদের ‘গুন্ডা ও বিপজ্জনক’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, আপনারা শান্ত হোন। ফ্লয়েডের মৃত্যু আমাদের জন্য শোকের। আমরা শোকাহত, আমরা উত্তেজিত নই। উত্তেজিত হয়ে গুন্ডামি করার সময় এখন নয়।

২৫ মে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর মিনিয়াপলিসে পুলিশ জর্জ ফ্লয়েড নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করলে এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। ফ্লয়েডের গাড়িতে জাল নোট থাকার খবর পেয়ে তাকে আটক করতে গিয়েছিল পুলিশ।

একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ১০ মিনিটের ভিডিওতে দেখা গেছে, হাঁটু দিয়ে ফ্লয়েডের গলা চেপে ধরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করছে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ সদস্য। নিহত ফ্লয়েড নিরস্ত্র ছিলেন এবং তিনি বারবার বলছিলেন, ‘আমাকে দয়া করুন, আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।’

কৃষ্ণাঙ্গদের দাবি, বর্ণবিদ্বেষের বলি হয়েছেন ফ্লয়েড। আর এই হত্যাকান্ডের জেরে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র।

 

টাইমস/এসএন

Share this news on: