পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধে একজোট হলেন মালিক-শ্রমিক নেতারা

দীর্ঘদিন থেকে পরিবহনে চাঁদা আদায় একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। এ খাঁতে প্রতিদিন কোটি টাকা চাঁদা উঠতো সারাদেশে-এমনটা বার বার আলোচনায় এসেছে। আর এসব অভিযোগের তীর থাকতো পরিবহন খাতের শীর্ষ সংগঠনগুলোর দিকে। তবে এবার পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধে একযোগে উদ্যোগী হয়েছেন মালিক শ্রমিক নেতারা।

এবারই প্রথম শীর্ষ সংগঠনগুলো চাঁদার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নিচ্ছ। তাদের অধীনস্থ সমিতি ও কমিটিতে চাঁদা বন্ধে স্বউদ্যোগে চিঠি দিচ্ছেন।

সম্প্রতি পুলিশ প্রধান পরিবহন মালিকদের নিয়ে বৈঠক করে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এরপরই মালিক নেতাদের সংগঠনগুলো থেকে নির্দেশনা আসে চাঁদা বন্ধের। সব সংগঠনগুলোর যৌথ সিদ্ধান্তের চিঠি ছাড়াও পৃথক ভাবে সংগঠনগুলো চাঁদার বিরুদ্ধে চিঠি ইস্যু করতে দেখা গেছে।

এসব চিঠিতে সব সড়ক-মহাসড়ক ও টার্মিনালে চাঁদা সম্পূর্ণরূপে বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, টার্মিনাল সড়ক বা মহাসড়ক বা অন্য কোথায় গাড়ি থেকে কোন প্রকার চাঁদা তোলা যাবে না।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদার বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান শুরু হয়েছে বলে মালিক সমিতি জানিয়েছে।

পরিবহন সূত্র জানায়, এ খাতের শীর্ষ তিন সংগঠন সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, সড়ক পরিহন শ্রমিক ফেডারেশন ও বাস ট্রাক অনাস অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে চাঁদা আদায় বন্ধে একমত হয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার মূল কথা- এখন থেকে পরিবহনে সব ধরণের চাঁদা আদায় বন্ধ।

তবে একজন পরিবহন শ্রমিক নেতা দাবি করেছেন, টার্মিনাল ও সড়কে চাঁদা বন্ধ হলেও ঢাকায় কোম্পানি ভিত্তিক চাঁদা এখনও বহাল আছে। এর জবাবে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এসব কোম্পানি ভিত্তিক বাস চলা উঠিয়ে দিতে প্রস্তাব করেছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, কোথাও চাঁদা তোলা যাবে না। সারাদেশের তার সংগঠনের সব শাখায় এই নির্দেশনা পাঠিয়ে দিয়েছেন। কেউ কোথায় চাঁদা নিলে তাকে ধরিয়ে দিতে হবে। এরই মধ্যে পুলিশের অ্যাকশন শুরু হয়েছে। পুলিশ আটকও করেছে। এ অভিযান চলছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিকলীগের সভাপতি হানিফ খোকন সড়ক পরিবহনে চাঁদাবাজির অভিযোগ করে আসছিলেন দীর্ঘ দিন থেকে। সম্প্রতি মালিকদের যৌথ সিদ্ধান্তের পর তিনি বলেন, মালিকদের এমন যুগপৎ ঘোষণার পর টার্মিনাল ও সড়কে চলা পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় বন্ধ হয়েছে। কিন্তু ঢাকার ভেতরে হিউম্যান হুলার, লেগুনা, সিএনজি থেকে চাঁদা তোলা বন্ধ হয়নি।

তিনি জানান, প্রতিটি হিউম্যান হুলার থেকে দিনে ৭ থেকে ৮শ টাকা চাঁদা আদায় করা বন্ধ হয়নি। এছাড়া ঢাকায় সুপ্রভাত, ট্রান্সলিলভা নুরে মক্কা, সালসাবিল, ভিআইপি সহ যেসব বাস চলে এসব কোম্পানি ভিত্তিক চাঁদা এখনও রয়েছে। এসব কোম্পানির নিজস্ব কোন বাস নেই। বিভিন্ন মালিক টাকা দিয়ে কোম্পানির অধীনে বাস দেন। আবা প্রতিদিন বাসের আয় থেকে কোম্পানিকে চাঁদা দিতে হয়।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা সড়ক ‍পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, কোম্পানিভিত্তিক বাস উঠিয়ে দিতে তারা প্রস্তাব করেছেন। এসব চাঁদা আর নেওয়া যাবে না। দেশের কোথাও কেউ পরিবহনে চাঁদা তুললে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। এমনটা আমরা নিজেরা খবর পেলে এখন পুলিশে ধরিয়ে দিচ্ছি।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: