শ্রীলংকায় করোনায় মৃত মুসলিমদের পোড়ানো হচ্ছে

শ্রীলংকা হচ্ছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ১৮২টি সদস্যের মধ্যে একমাত্র দেশ, যেখানে কোভিড-১৯এ মৃত মুসলিমদের দাহ করা হচ্ছে, এক আবেদনে এ কথা বলেছেন আলি জহির মওলানা, যিনি একজন সাবেক মন্ত্রী এবং আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে একজন প্রার্থী। খবর বিবিসি

বিবিসি সিনহালাকে তিনি বলেন, মৃতদেহ কবর দেয়াটা যে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এর কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ থাকলে শ্রীলংকার মুসলিম জনগোষ্ঠী সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেবে। শ্রীলংকার মুসলিম কংগ্রেসের উর্ধতন নেতারা তার এ বক্তব্য সমর্থন করেছেন।

তারা বলছেন, এটা স্পষ্ট যে দাহ করার পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক বা স্বাস্থ্যগত ভিত্তি নেই, এবং সরকারের সিদ্ধান্তটি আসলে দেশটিকে জাতিগতভাবে বিভক্ত করার এক সুগভীর এজেন্ডার ভিত্তিতেই নেয়া হয়েছে।

শ্রীলংকার সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির সুযোগ নিয়ে সেদেশের কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। মুসলিম কেউ মারা গেলে তার লাশ দাহ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ।

মে মাসের ৪ তারিখ তিন সন্তানের মা ৪৪ বছর বয়স্ক মুসলিম নারী ফাতিমা রিনোজাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি
শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোর বাসিন্দা। ফাতিমা শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন বলে তার করোনা সংক্রমণ হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করে।

যেদিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সেদিন থেকেই কর্তৃপক্ষ তাদের পরিবারের ওপর ‘চড়াও হয়‌’ বলে অভিযোগ করেন ফাতিমার স্বামী মোহামেদ শফিক।

শফিক বলেন “পুলিশ এবং সামরিক বাহিনী কর্মকর্তাদের নিয়ে আমাদের বাড়ির দরজায় এসে হাজির হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাড়ি থেকে আমাদের বের করে সবখানে জীবাণুনাশক ছিটানো হয়।”

তিনি বলেন, “পরিবারের সবাইকে এমনকি তিন মাসের বাচ্চাকেও ভাইরাস টেস্ট করা হয় -তারপর তারা আমাদেরকে কুকুরের মত করে কোয়ারেন্টিন সেন্টারে নিয়ে যায়। পুরো পরিবারটিকে এক রাত সেখানে আটকে রাখা হয়, পরদিন তাদের ছেড়ে দিয়ে বলা হয়, তাদের দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে ।”

এর মধ্যেই খবর আসে যে ফাতিমা মারা গেছেন। তিনি একাই হাসপাতালে ছিলেন। পরে ফাতিমার প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে বলা হলো হাসপাতালে গিয়ে তার মায়ের লাশ সনাক্ত করতে।

তাকে বলা হলো, যেহেতু কোভিড-১৯এ ফাতিমার মৃত্যু হয়েছে তাই তার লাশ পরিবারের কাছে ফেরত দেয়া হবে না।

ফাতিমার ছেলের অভিযোগ, তার মায়ের লাশ দাহ করার অনুমতিসূচক কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে তাকে বাধ্য করা হয়।

অথচ, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় কোভিড-১৯ এ মারা যাওয়া লোকদের কবর দেয়া যাবে বলে বলা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও শ্রীলংকার কর্তৃপক্ষ তাদের করোনায় কোনো মুসলিম মারা গেলে তার লাশ দাহ করতে বাধ্য করছে।

সরকারের প্রধান সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ড. সুগত সামারাবীরা বলেছেন, সরকারের নীতি হচ্ছে কোভিড-১৯এ আক্রান্ত বা আক্রান্ত সন্দেহে যারাই মারা যাবে, তাদের লাশ দাহ করা হবে। তার দাবি, কবর দেয়া হলে তা ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তরকে দূষিত করতে পারে।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: