চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ত্রিপুরা আসামে যাবে ভারতীয় মালামাল

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা ও আসামে পণ্য পরিবহনের ‘ট্রায়াল রান’ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার কলকাতা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে কনটেইনার নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ‘এমভি সেঁজুতি’।

মালবাহী জাহাজটি আগামী বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক এসব বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের উন্নয়নে মালামাল পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে করা ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার শুরু করবে ভারত।

প্রথম চালানের অংশ হিসেবে ‘এমভি সেঁজুতি’ নামে একটি জাহাজ এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কলকাতায় পৌঁছেছে। জাহাজটি ১১ জুলাই কলকাতার উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যায়। আজ (মঙ্গলবার) জাহাজটি ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেবে। ১৬ জুলাই এটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে বলে জানান ওমর ফারুক।

তিনি আরও বলেন, ‘এমভি সেঁজুতি’ প্রথম ট্রায়াল রানে চারটি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। নিয়ম অনুযায়ী ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য চার্জ আদায় করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর বাইরে রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক, সড়ক ব্যবহার ও নিরাপত্তার জন্য যেসব মাশুল নির্ধারিত আছে, সেগুলোও আদায় করা হবে।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ভারতীয় হাইকমিশনের একটি চিঠিতে জানানো হয়েছে, চারটি কনটেইনারের দুটিতে রয়েছে রড এবং অপর দুটিতে রয়েছে ডাল। চালান দুটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর পর জাহাজ থেকে নামিয়ে তা সরাসরি বাংলাদেশের কনটেইনার পরিবহনকারী গাড়ি প্রাইম মুভার ট্রেলারে করে ভারতের আগরতলার উদ্দেশে রওনা হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, আগরতলা থেকে মাল খালাসের পর রডের চালান নেয়া হবে পশ্চিম ত্রিপুরার জিরানিয়ায়। চালানটি ভারতের এসএম কর্পোরেশনের। অপরদিকে আগরতলায় ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট বা আইসিপিতে খালাস করে ডালের চালান ভারতীয় ট্রাকে করে আসামের করিমগঞ্জে জেইন ট্রেডার্সের কাছে নেয়া হবে। এটি হবে চট্টগ্রাম বন্দর ও সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য তাদের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পরিবহনের প্রথম পরীক্ষামূলক কার্যক্রম।

পরীক্ষামূলক চালানে পণ্য পরিবহন বাবদ ভাড়া ও বাংলাদেশ অংশে প্রস্তাবিত বিভিন্ন মাশুল পাবে বন্দর, কাস্টমস এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

জানা গেছে, গত ৫ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, শুধু প্রথম ট্রায়াল রানের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রযোজ্য প্রশাসনিক ফি মওকুফ করা হয়েছে। তবে ট্রায়াল রানে অন্যান্য ফি প্রযোজ্য হবে। ফি’র একটি নির্ধারিত তালিকাও দেয়া হয়েছে চিঠিতে।

চিঠিতে বলা হয়, ভারতীয় পণ্য ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সাত ধরনের মাশুল আদায় করবে। এই সাতটি হলো- প্রতি চালানের প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, প্রতি টনের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ৩০ টাকা, নিরাপত্তা মাশুল ১০০ টাকা, এসকর্ট মাশুল ৫০ টাকা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক মাশুল ১০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কনটেইনার স্ক্যানিং ফি ২৫৪ টাকা এবং বিধি অনুযায়ী ইলেকট্রিক সিলের মাশুল প্রযোজ্য হবে। এই নির্ধারিত সাতটি মাশুল বাবদ বাংলাদেশ কনটেইনারপ্রতি ৪৮-৫৫ ডলার পাবে। এই মাশুলের বাইরে চট্টপ্রাম বন্দরের মাশুল যুক্ত হবে বলে বন্দর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আর সড়কপথে পণ্য পরিবহন ভাড়া পাবে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, কলকাতা থেকে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছলে এনবিআর নির্ধারিত ট্রান্সশিপমেন্ট ফি আদায়ের পর কনটেইনারগুলো কাস্টমসের অধীনে এসকর্ট দিয়ে আখাউড়া বিবিরবাজার পৌঁছে দেয়া হবে। ভারতের পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের মাশুল আদায় করবে।

 

টাইমস/এসএন

Share this news on: