শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক রেখে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

শ্রমিক-মালিক সবাইকে সুসম্পর্ক রক্ষা করে উৎপাদন বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশটা আমাদের। এখানে উভয়ে এক হয়ে কাজ করতে হবে। কোনো সমস্যা হলে আমরা দেখব। এ জন্য কারও দুয়ারে যাওয়ার দরকার নেই। আমাদের মাটি ও মানুষের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য আমরা জানি। সমস্যার সমাধানও আমরা করতে পারব।

আজ বুধবার (১ মে) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান মে দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আমাদের দেশ আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ব। এ জন্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। নিজেদের প্রয়োজন নিজেরা মেটাব। কারও কাছে হাত পাতব না। জাতির পিতা বলেছেন, ভিক্ষুক জাতির মর্যাদা থাকে না। আমাদের জনবল আছে, শ্রম দিতে পারব, বাকি সম্পদকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বাড়াব।

শ্রমিকদের জন্য নেওয়া তার সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্প কলকারখানা যাতে বন্ধ না হয়, সে ব্যবস্থা নিয়েছি। এমনকি করোনায় আমরা প্রণোদনা দেওয়াসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট সংকটেও শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের পাশে ছিলাম। গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি ৮২০০-১২৫০০ করে দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কিছু লোক আছে, কথায় কথায় শ্রমিকদের নিয়ে রাস্তায় নেমে যায়। যে কারখানা আপনার রুটি-রুজির যায়গা, এতে আপনার পরিবারও চলে। সে কারখানা বন্ধ হলে আপনি, আপনার পরিবার ও মালিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু লাভবান কে? এগুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আমরা চাই, মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষ লাভবান হোক।

তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে নারী-পুরুষ সমান মজুরি পায় না। আমরা সেটা সমান করে দিয়েছি। নারী শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদের থাকার জন্য ডরমিটরি করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার পর মে দিবসকে প্রথমে শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতিও দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, মা যেমন একটা রুগ্ন সন্তানকে বুকে নিয়ে লালন-পালন করে গড়ে তোলেন, ঠিক সেভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার পর শূন্য হাতে একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব হাতে নিয়ে সব কলকারখানা জাতীয়করণ করেন। শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেন। তাদের কর্মসংস্থান যাতে ঠিক থাকে সে পদক্ষেপটাই তিনি হাতে নিয়েছিলেন।

শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য মজুরি কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মে দিবসের সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। এদেশে মানুষের মধ্যে যে বৈষম্য সে বৈষম্য তিনি দূর করতে চেয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আওয়ামী লীগের একমাত্র লক্ষ্য। আমরা সব সময় সেই পদক্ষেপ নিই। জাতির পিতা যখন দেশটাকে গড়ে তুলেছেন, তখন যে সব মালিক বাংলাদেশে ছিল শিল্প কলকারখানা মালিক তারা হবেন। আর যেগুলো মালিকানাবিহীন সেগুলো সরকার চালাবে। সে ব্যবস্থাও তিনি করেছিলেন, সরকারি খাতকেও গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, মাত্র ৯ মাসের তিনি আমাদের একটি সংবিধান দেন। সংবিধানের ১৩ অনুচ্ছেদে আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালা কী? সেটা কিন্তু স্পষ্ট বলা আছে। সেখানে যেমন সরকারি প্রতিষ্ঠার থাকবে, সমবায় হবে এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থাকবে। অর্থনীতিকে বহুমুখী করে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, মানুষের জীবনমান উন্নত করার এটাই ছিল জাতির পিতা লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে তিনি কাজ করেছেন।

সরকারপ্রধান বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আমরা সরকার গঠন করে আমাদের প্রধান কাজ হলো মানুষের কল্যাণ করা। সেই প্রচেষ্টাই আমরা হাতে নিয়েছিলাম। আমরা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। ২০০৮ নির্বাচনের ইশতেহারে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মো. মাহবুব হোসেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এম ইব্রাহীম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি আরদাশীর কবির, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর কুতুব আলম মান্নান।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করতে মিসরে যাচ্ছেন মার্কিন দূতরা Oct 05, 2025
img
‘গুরু’ আর কৃষক: এক ফ্রেমে দুই জীবনের মিলন Oct 05, 2025
img
শিগগিরই দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হবে: চিফ প্রসিকিউটর Oct 05, 2025
img
১৫টি ক্লাব বিসিবি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে, নেই বাঁধা Oct 05, 2025
img
জুলাই সনদকে গ্রহণযোগ্য দলিলে পরিণত করার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার Oct 05, 2025
img
আমি জানি আপনারা এটির জন্য অপেক্ষা করছিলেন: রাশমিকা Oct 05, 2025
img
ভরা মজলিসে স্ত্রীর গোপন কথা ফাঁস করলেন শোয়েব মালিক Oct 05, 2025
img
বাবা-মাকে নিয়ে সমালোচনার জবাব দিলেন নুহাশ Oct 05, 2025
img
আদালতের কাজ হচ্ছে সংবিধান সমুন্নত রাখা : সারোয়ার তুষার Oct 05, 2025
img
দুর্নীতির মামলায় খালাস পেলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায় Oct 05, 2025
img
তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারে পানি বাড়ছে, নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা Oct 05, 2025
img
দুই ঘণ্টায় ডিএসইতে লেনদেন ২৭৬ কোটি টাকা Oct 05, 2025
img
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে সরকার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Oct 05, 2025
img
জরিপে যাই আসুক, নির্বাচনে অনেক কিছু ওলট-পালট হয়ে যায় : রুমিন ফারহানা Oct 05, 2025
img
পাশের দেশ থেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Oct 05, 2025
img
শেকড়ের টানে ফিরে আসার গল্প নিয়ে আসছে ‘শেকড়’ Oct 05, 2025
img
জামায়াত আমিরের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ Oct 05, 2025
img
গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথ আরো অনিশ্চিত হচ্ছে : জিল্লুর রহমান Oct 05, 2025
img
মার্কিন মুদ্রায় ট্রাম্পের ছবি নিয়ে বিতর্ক, নকশা প্রকাশের পর বাড়ছে প্রতিক্রিয়া Oct 05, 2025
img
খুব শিগগিরই জমা দেয়া হবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন: আলী রীয়াজ Oct 05, 2025