বাংলাদেশেও বিপদ ঘটাতে পারে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট

অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ নিয়মিত বাংলাদেশে ঢুকছে। আর এই মারাত্মক দাহ্য পদার্থটি দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে। কিন্তু এটি কীভাবে দেশে ঢুকছে এবং দেশের কোন কোন এলাকায় তা পৌছে যাচ্ছে তার কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই। এতে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের আমদানি ও গুদামজাত প্রক্রিয়া তদারকির দায়িত্ব রয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিস্ফোরক পরিদপ্তরের ওপর। কিন্তু দাহ্য ও রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি ও গুদামজাত প্রক্রিয়া তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়োজিত আছেন মাত্র ৫ জন কর্মকর্তা। পর্যাপ্ত জনবল সংকটের কারণে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কার্যক্রমও থমকে আছে। কোনো রকম ঢিমেতালে চলছে কাজ।

আর তাই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য বাংলাদেশে ঢুকে তা কোথায় কোথায় যাচ্ছে, কোন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, তার কোনো সঠিক তথ্যও নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে।

বিস্ফোরক পরিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, আমদানি করা এই অতি-মারাত্মক রাসায়নিকের গুদামজাত করার উপযোগী কোনো গুদাম বাংলাদেশে নেই। এছাড়া জনবল সংকটের কারণে দাহ্যপদার্থ ও রাসায়নিক দ্রব্য নিরাপদে সংরক্ষিত হচ্ছে কীনা তাও জানা যাচ্ছে না। এগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হয় বলেও জানায় বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে বিস্ফোরক পরিদপ্তরে জনবল সংকটের কথা স্বীকার করেচে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদক মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উৎপাদন করা হচ্ছে কীনা, কিংবা সেগুলো নিরাপদভাবে বিক্রি, পরিবহণ কিংবা গুদামজাত করা হচ্ছে কীনা, সে বিষয়ে গ্রহণযোগ্য কোনো তথ্য তাদের হাতে নেই।

তবে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, ঢাকায় দুজন এবং চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে একজন করে বিস্ফোরক পরিদর্শক রয়েছেন। এছাড়া এই পরিদপ্তরে আর কোন পরিদর্শক নেই। রয়েছে অন্যান্য কাজের জন্য পর্যাপ্ত জনবল সংকট।

সম্প্রতি লেবাননের রাজধানী বৈরুতের নৌ-বন্দরের কাছে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর বিশ্বজুড়ে দাহ্য পদার্থ নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। বৈরুত বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। আহত হয়েছে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ।

বৈরুত বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে চারজন বাংলাদেশিও ছিলেন। এছাড়া এই ঘটনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অন্তত ২১ জন সদস্য আহত হয়েছেন এবং নৌবাহিনীর একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

নৌবাহিনীর জাহাজটি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে লেবাননের বৈরুতে দায়িত্ব পালন করছিল।

এদিকে বৈরুত বিস্ফোরণের পর বাংলাদেশেও উদ্বেগ ছড়িয়েছে। এর আগে বিগত বছর পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় রাসায়নিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই বিস্ফোরণে বহু মানুষ হতাহত হন। তাই বৈরুত বিস্ফোরণের পর এবার নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশ সরকার।

এরই মধ্যে রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহন ও গুদামজাতকরণে সতর্কতা অবলম্বন বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে জেলায় জেলায় চিঠি পাঠিয়েছে বিস্ফোরক পরিদপ্তর।

এসব বিষয়ে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান মো. মঞ্জুরুল হাফিজ গণমাধ্যমকে জানান, বৈরুত বিস্ফোরণের পর দেশের সকল বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, স্থল, নৌ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো বিস্ফোরক পদার্থ আমদানি করা হলে, যেন তা দ্রুত বন্দর এলাকা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।

মঞ্জুরুল হাফিজ আরও বলেন, আমদানি করা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সাধারণত বন্দরের নিরাপত্তা প্রহরীদের পাহারায় থাকে। পরে তা বন্দর থেকে বের করে পুলিশী পাহারায় গুদামে তোলা হয়। তাই বৈরুত ঘটনার পর থেকে আমাদের বাড়তি সতর্কতা নিতেই হচ্ছে।

বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান জানান, বিস্ফোরিত হতে পারে এমন রাসায়নিক দ্রব্য আমদানির জন্য বর্তমানে দেশে তিনটি বেসরকারি কোম্পানীকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মেডিকেল চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন উপাদান তৈরির জন্যই মুলত তারা এসব দ্রব্য আমদানি করে থাকে।

তবে সরকারি পর্যায়ে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আমদানির জন্য শুধুমাত্র মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানির অনুমোদন রয়েছে বলে তিনি জানান।

 

টাইমস/এসএন

Share this news on: