ফাহিমের প্রতিবন্ধকতা জয়ের গল্প

অদম্য ইচ্ছা শক্তির বলে অনেক মানুষ পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন। পেয়েছেন অমরত্ব। এমনই একজন ফাহিমুল করীম। ইচ্ছা শক্তির জোরে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও দারিদ্রতা জয় করেছে মাগুরার কৃতি সন্তান ফাহিম। মাথা ও ডান হাতের দুটি আঙ্গুল ছাড়া ফাহিমের শরীরের সবকিছুই অচল। আর তাই মাথা ও হাতের দুটি আঙ্গুল কাজে লাগিয়েই সফল ফাহিমুল করীম। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে মাসে গড়ে ৫০ হাজার টাকা আয় করে সংসারের হাল ধরেছে ফাহিম।

ফাহিম শুধু সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনেনি, উপার্জিত অর্থ দিয়ে মাগুরা শহরে জমি কিনে বাড়ি করে মা-বাবার মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে এই বিস্ময়বালক। তাকে এ কাজে অনুপ্রাণিত করতে তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফাহিমকে একটি ল্যাপটপ প্রদান করেছেন।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলছেন, ফাহিম প্রতিবন্ধকতা জয় করে অদম্য মেধাশক্তি কাজে লাগিয়ে সফলতা অর্জন করেছে। সমাজের বেকার যুবকদের জন্য সে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পরে।

একটি বেসরকারি কোম্পানির বিপণন কর্মী রেজাউল করীম জানান, মাগুরা শহরের ভায়না পিটিআই পাড়ার ভাড়া বাসায় একমাত্র ছেলে ফাহিম, স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে তিনি বসবাস করেন। টানাটানির সংসার হলেও ভাল ভাবেই কাটছিল তাদের দিন। কিন্তু ২০১২ সালে জেএসসি পরীক্ষার আগে হঠাৎ করেই শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে একমাত্র ছেলে ফাহিম।

চিকিৎসকরা জানান, ডুচেনেমাসকিউলার ডিসথ্রফি রোগে আক্রান্ত ফাহিম। বাংলাদেশ ও ভারতের চিকিৎসকদের কাছে নেয়া হয় তাকে। কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, জেনেটিক এ রোগে তেমন কোনো চিকিৎসা নেই দেশে-বিদেশে কোথাও। জটিল এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ধীরে-ধীরে হাত-পাসহ গোটা শরীর শুকিয়ে প্রতিবন্ধী হতে থকে ফাহিম। এক পর্যায়ে হাতের দুটি আঙ্গুল ও মাথা ছাড়া গোটা শরীর অচল হয়ে যায় ফাহিমের। অসুস্থ শরীরে ফাহিম তার হাতের মাত্র সচল দুটি অঙ্গুল দিয়ে অনলাইনে কাজ করে মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় করছে। সংসারের ভার এখন তার ওপর। এছাড়া ফাহিম মাগুরা শহরের জমি কিনে বাড়ি করে তাদের মাথা গোঁজা ঠাঁই করেছে দিয়েছে। রেজাউল করিম বলেন, পুরোপুরি সুস্থ্য না হলে দেশের বাইরে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার করাতে পারলে ফাহিমের শারীরিক অবস্থা কিছুটা হলেও ভাল হতো। তিনি এজন্য সরকারের সহায়তা কামনা করেছেন।



ফাহিমুল করীম জানায়, স্টিফেন হকিংস তার জীবনের অনুপ্রেরণা। তার অনপ্রেরণার সাথে মনোবল, প্রবল ইচ্ছা শক্তি ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে তিনি এখন দেশসেরা একজন ফ্রিল্যান্সার। ২০১৬ সালে অন্যের সহযোগিতা, নিজের প্রাইভেট পড়িয়ে জমানো টাকা ও ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে তিনি একটি ল্যাপটপ কিনেন। এরপর ইন্টারনেটে গুগল ও ইউটিউব ঘেঁটে বিভিন্ন কাজ শেখে। ২০১৭ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইন মার্কেটে ফাইবারে গিগ খুলে কাজ খুঁজতে থাকে। ক’দিনের মধ্যে ৫ ডলারের একটি কাজ পেয়ে যান। অল্প সময়ের মধ্যে সফলভাবে কাজটি করার জন্য বায়ার তাকে আরো ১০ ডলার বোনাস দেয়।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ফাহিমকে। প্রথমে ব্যানার ও বিজেনস কার্ড দিয়ে কাজ শুরু করলেও সে এখন সব ধরণের কাজই করে থাকেন। কাজের দক্ষতার কারণে এখন ফাইবারে লেভেল টুতে টপ রেটেড আপওয়ার্কার। বর্তমানে বিশ্বের ৩০ থেকে ৩৫টি দেশের বায়ারদের সাথে করছে ফাহিম। অর্ডার এত বেশি যে, দিন রাত ২৪ ঘন্টা সময় দিলেও কাজ শেষ হবে না। ফ্রিল্যন্সার হিসেবে কাজ করে গত ৪ বছর ধরে ফাহিম মাসে গড়ে ৫০ হাজার টাকা করে আয় করছে। তার উপার্জনে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরেছে। বোনের লেখাপড়া চলছে। আগে ভাড়া বাসায় থাকলেও এখন তার টাকায় শহরের মোল্লাপাড়ায় জমি কিনে বাড়ি করা হয়েছে। বর্তমানে সেই বাড়িতে ফাহিম পরিবারের সাথে বসবাস করছে। ফহিমও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের প্রতি সহায়তা কমনা করছেন।

সদর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা ঝুমুর সরকার বলেন, তার অধিদপ্তর এর পক্ষ থেকে ফাহিমকে আগেও সহায়তা করা হয়েছে। আগামীতেও প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সহোযোগিতা করা হবে। কারণ ফাহিম প্রতিবন্ধকতা জয় করে অদম্য মেধা শক্তি কাজে লাগিয়ে আজ সফলতা অর্জন করেছে। সামাজের বেকার যুবকদের জন্য সে অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হতে পরে।

 

টাইমস/এসই/এসএন

Share this news on: