সুকুন্তলা তন্তবায়। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সুরমা চা বাগানের ১০ নং বস্তি এলাকায় বসবাস করেন। বাবা মনিন্দ্র তন্তবায় ও মা লক্ষী তন্তবায় চার ভাই বোনকে রেখে মারা গেছেন বহু বছর আগে। বড় বোন সুকুন্তলার উপর সংসারের দায়ভার পড়ে। বিয়ের কয়েক বসন্ত পার হয়ে গেলেও এ নিয়ে সুকুন্তলার কোন চিন্তা নেই। চার ভাই বোনের সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে এখন পাহাড় ও চা বাগান থেকে লাকড়ি কুড়িয়ে বাই সাইকেলের প্যাডেল চাপিয়ে বাজারে এনে বিক্রি করেন।
তবে করোনার মধ্যে সুকুন্তলার লাকড়ি বিক্রির চাহিদাও কমে গেছে। তবে করোনা কাকে বলে এ বিষয়ে সুকুন্তলার কোন চিন্তা নেই। একমাত্র ভাই নয়ন তন্তবায় সুরমা চা বাগানে একশ চার টাকার মজুরিতে বাগানে কাজ করেন। ভাই বোনের এই আয় দিয়ে সুকুন্তলার পরিবার কোন রকমে খেয়ে পরে বেঁচে আছেন।
হাজারো মানুষের মধ্যে ব্যাতিক্রম সুকুন্তলা তন্তবায় সাইকেলে চেপে পাহাড় ও বাগানে শুকনো লাকড়ি কুড়াতে যান। সাইকেল নিয়ে সুকুন্তলার এই জীবন যুদ্ধ নিয়ে অনেকেই হাসি তামাশাও করেন। কিন্তু জীবনের প্রয়োজন বলে কথা। সব বাধা উপেক্ষা করে বেঁচে থাকার তাগিদে নারী হয়েও সুকুন্তলা লাকড়ি কুড়ানোর মত কঠিন কাজটি করে যাচ্ছেন।
আদিবাসী কন্যা সুকুন্তলা তন্তবায় জানান, মা-বাবা মারা যাওয়ার পর এক ভাই, ৩ বোনসহ আমাদের চারজনের পরিবার। ভাই-বোনদের মধ্যে আমি সবার বড়। সংসারের হাল ধরতে গিয়ে কোন কাজ না পেয়ে সাইকেল চালিয়ে বাগান থেকে শুকনো লাকড়ি কুড়িয়ে বাজারে বিক্রি করি। আমাদের থাকার ঘর খুবই জরাজীর্ণ। বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসার সংকট রয়েছে আমাদের। শুনেছি সরকার দরিদ্রদের ঘরবাড়িসহ নির্মাণ করে দেয়াসহ বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করে। কিন্তু আমাদের কেউ কোন ধরনের সহযোগিতা করেনি। ভাই বোনদের কথা চিন্তা করতে গিয়ে নিজের বিয়ের কথাও বাদ দিয়েছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক মিয়া জানান, সুকুন্তলা তন্তবায় দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হয়েও কারো কাছে হাত পাতেনি। প্রতিদিন সাইকেল দিয়ে লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে।
উপজেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা জান্নাত সুলতানা জানান, চা বাগানে নারীদের জীবন-মান উন্নয়নে একটি প্রকল্প রয়েছে। সুকুন্তলা তন্তবায় নারীদের প্রেরণা। তার জীবনমান কিভাবে উন্নত করা যায় সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
টাইমস/এসই/এসএন