করোনাকালেও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের কাজ

করোনা মহামারীর মধ্যেও পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুত গতিতে। লক্ষাধিক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সর্ববৃহৎ এ প্রকল্পের ৩০ ভাগ কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে প্রকল্পের কাজে জনবলও বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে দেশি ও বিদেশি প্রায় দশ হাজারেরও বেশি শ্রমিক এ প্রকল্পে কাজ করছে। সিডিউল অনুযায়ী কাজ এগিয়ে চলেছে বলে প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর জানিয়েছেন।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও কাজের গতি আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। দু’টি ইউনিটের রিঅ্যাক্টর ভবন নির্মাণ কাজে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। নির্মাণ কাজ ৩০ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে দুই হাজার বিদেশিসহ দশ হাজারের বেশি জনবল এই প্রকল্পের মহাকর্মযজ্ঞে নিয়োজিত রয়েছেন। বিদেশিদের মধ্যে বেশিরভাগই রাশিয়ান নাগরিক ও পারমাণবিক কাজে বিশেষজ্ঞ। রুশ আর্থিক সহায়তায় ১,০৭৯ একর এবং রেলওয়ের প্রায় ৭৫ একর জমির ওপর নির্মিত এই প্রকল্পের দুটি ইউনিটের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ১,০১,২০০ কোটি টাকা।

করোনা পরিস্থিতিতে প্রকল্পের সার্বিক কর্মকান্ডের বর্ণনা দিয়ে ড. শৌকত আকবর জানান, করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। লকডাউন শুরুর পর থেকেে এ যাবত ৭৮ জন রাশিয়ান বিশেষজ্ঞ দেশে ফিরে গেছেন। অপরদিকে ৩টি চার্টার্ড বিমানে ৫৭০ জন বাংলাদেশে এসেছেন। ১১ জন জার্মান নাগরিকও এসে যোগ দিয়েছেন প্রকল্পের কাজে।

পারমাণবিক কাজে অভিজ্ঞ ভারতীয় ৮১ জনকেও বাংলাদেশের রূপপুর প্রকল্পে যোগদানের অনুমতি দেয়া হয়েছে। চলতি আগষ্টের মধ্যে আরও প্রায় ৭৫০ জন রাশিয়ান বিশেষজ্ঞ রূপপুর প্রকল্পে এসে পৌঁছাবেন।

প্রকল্প এলাকায় করোনাকালের স্বাস্থ্যবিধি প্রসঙ্গে প্রকল্পের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, কাজে যোগ দেয়ার আগে প্রতিদিনই তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। তাপমাত্রা বেশি থাকলে ৭ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হচ্ছে তাদের। এরপর আবারো পরীক্ষা করে সুস্থ মনে হলে কাজে যোগ দেয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কাজ করার সময়ও তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। রাশিয়ান ও প্রকল্পের মেডিকেল টিম এই কাজে সবসময় নিয়োজিত রয়েছে।

রূপপুর প্রকল্পে কর্মরতদের ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টিনের জন্য আলাদা আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানা গেছে। বিদেশ হতে আগতদের নমুনা পরীক্ষার ‘নেগেটিভ’ রিপোর্ট সাথে আনতে হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশে আসার পরে ১৪ দিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনেও থাকতে হচ্ছে। কঠোরভাবে এসব ব্যবস্থা নেয়ার কারণে নির্মাণ কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়নি বলে প্রকল্পের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ঈশ্বরদী রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ম ইউনিটের মূল স্থাপনার কাজ উদ্বোধন করেন। পরের বছরই দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

 

টাইমস/এসই/এসএন

Share this news on: