ডিজে নেহার টার্গেট বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী, খদ্দের বড়লোকের ছেলে!

ফারজানা জামান নেহা ওরফে ডিজে নেহা। পরনে থাকে প্রায় অর্ধ উলঙ্গ ওয়েস্টার্ন ড্রেস। চালচলনে বিকৃত রকমের আভিজাত্যের ছাপ। দিনে ঘুম, রাতে ডিজে ও মদের পার্টিতে অশ্লীল রকমের নাচ। কুইন নেহা নামে পরিচিত নেহার টার্গেট ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। আর খদ্দের ছিল বড়লোকের ছেলে। যাদের দিয়ে তিনি দেহব্যবসা করাতেন। আবার কখনও কখনও বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডদের একান্তে সময় কাটানোর সুযোগও করেে দিতেন। চলত ডিজে পার্টির নামে উদ্যাম নাচ, মদের আড্ডা। নামি-দামি ব্রান্ডের গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ানো নেহা বাগে আনা ধনী পরিবারের তরুণ-তরুণীদের নানা অপকর্মে লিপ্ত করে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা।

রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি ডিজে নেহা। ওই মামলাটি তদন্তের স্বার্থে এই নেহাকে ৫ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে একে একে গা শিউরে ওঠার মতো তথ্য বেরিয়ে আসছে। জানা যাচ্ছে, তার অন্ধকার জগতের যতো অপকর্মের গোপন খবর। তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, কেবল ডিজে নেহা নয় নেহার মতো এমন অনেক তরুণ-তরুণীই রয়েছে যাদের কর্মকাণ্ড একই রকমের, কেবল নামেই ভিন্ন। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে অশ্লীল জগতে পা বাড়ানো নেহার টার্গেট ছিলো ধনী পরিবারের তরুণ-তরুণীরা। বিশেষ করে নামি দামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিকেই ছিলো তার বিশেষ আকর্ষণ। টার্গেটকৃতদের সঙ্গে সখ্যতা তৈরিতে তার হয়ে একাধিক উশৃঙ্খল তরুণ-তরুণী মাঠ পর্যায়ে কাজ করতো। যাদেরকেও বিভিন্ন রকমের সুযোগ সুবিধা দিতো ডিজে নেহা। শিশা পার্টি, মদ পার্টি এবং অশ্লীল নাচের আয়োজনে দাওয়াত পেত সমাজের উচ্চ বিত্তের সন্তানরা। যারা নেহার হাত ধরেই বেলাল্লাপনায় জড়িয়ে পড়ে।

কুকর্মের কথিত মহারাণী নেহার কপাল খুলতো শিশা লাউঞ্জ ও মদের পার্টিতে। যে পার্টিতে যোগ দিতে আসা ধনী তরুণ-তরুণীরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতো। সেই সূত্র ধরে আকর্ষিত হয়ে যদি কেউ কাউকে একান্তে পাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করতো তাকে ডিজে নেহার সঙ্গেই যোগাযোগ করতে হতো। এই নেহাই টার্গেটকৃত তরুণ বা তরুণীকে ম্যানেজ করার কথা বলে চাহিদা প্রকাশকারীর কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতো। তার এই অবৈধ অর্থকড়ির খোঁজে নেমেছে গোয়েন্দারা।

ওয়েস্টার্ন স্টাইলে চলাফেরা করা নেহা খুবই চতুর প্রকৃতির রমণী। সে ধনী পরিবারের তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতে বিভিন্ন কলাকৌশল প্রয়োগ করতো। এই নেহার একাধিক টিম অভিজাত শ্রেণির ছেলে মেয়েদের টার্গেট করে তাদেরকে ডিজে পার্টি, শিশা লাউঞ্জ এবং মদের পার্টিতে নিয়ে আসতো। এ পার্টিগুলো সাধারণত অবৈধ বার বা লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত হতো। এসব পার্টি বাবদ অবৈধ বার বা লাউঞ্জ ব্যবসায়ীরা বড় অংকের টাকা পেতো। নেহার মাঠ পর্যায়ের টিমে নামি দামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় উশৃঙ্খল শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জানা গেছে। ডিজে নেহার পার্টিতে মদের সাপ্লাই দিতো অবৈধ মাদক কারবারীরা। কেবল তা’ই নয় ভালো লাগা তরুণী-তরুণীদের একান্তে মিলিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরের একাধিক আবাসিক হোটেল ও রিসোর্টের সঙ্গে যোগাযোগ ছিলো তার। ভয়ঙ্কর মাদক ইয়াবা চক্রর সঙ্গেও এই সুন্দরী রমণীর যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। ডিজে নেহা তার সঙ্গীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে ব্যাপক তৎপরতা চালাতো। এই তৎপরতায় ধনী পরিবারের কোনো তরুণ-তরুণী ফাঁদে পড়লেই কূটকৌশল খাটিয়ে তাকে অশ্লীলতায় জড়িয়ে ফেলা হতো।

এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী মাধুরীকে অতিরিক্ত মদপান করিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন বান্ধবী ফারজানা জামান নেহা। এর পর থেকেই আলোচনায় চলে আসেন ডিজে নেহা। ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকলেও বৃহস্পতিবার রাতে আজিমপুরের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাকে আটকের পর কিছু ভিডিও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, ডিজে নেহার উদ্যাম নাচানাচি। পুলিশ বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় পার্টির আয়োজন করত ডি জে নেহা, চলত উদ্যাম নৃত্য।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, নেহা ও আরো যারা ছিল তাদের কাজই ছিল প্রতিরাতে রাজধানী বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় পার্টির আয়োজন করা। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পার্টিতে অ্যাটেন্ড করা ও নাচ গান করা। এটা তার পেশা ছিল। মোবাইলেও তার এ ধরনের প্রমাণ পেয়েছি। আরাফাত ও মাধুরির মৃত্যুর মূল কারণই ছিল অতিরিক্ত মদ্যপান করা। পুলিশ জানায়, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে উদঘাটিত হবে আসল রহস্য।

হারুণ অর রশীদ আরও বলেন, এ মামলার আসামি ৫ জনের মধ্যে আরাফাত মারা গেছেন। মামলার অন্য আসামি রায়হান ও নুহাত আলম তাফসীরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, সর্বশেষ নেহাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি রয়েছে একজন। সেও আদালতে হাজির হয়েছেন, তাকেও আমরা রিমান্ডে আনব।

রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ আদালতে আসামির রিমান্ড চেয়ে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, আসামি নেহা ওই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড। তার ডাকে সাড়া দিয়ে অপর আসামিরা ভিকটিমকে নিয়ে ডিজে পার্টিতে যায়। সেখানে ভিকটিমকে বিষাক্ত মদ পান করানো হয়। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। পরবর্তী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিমের মৃত্যু হয়। বিষাক্ত মদ পান করানোর ফলেই অপার সম্ভাবনাময় ভিকটিমের মৃত্যু হয়।

আদালত সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার মামলার আসামি সাফায়েত জামিল আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে আদালত তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরও আগে গত ৩১ জানুয়ারি ওই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর বন্ধু মর্তুজা রায়হান চৌধুরী (২১) ও নুহাত আলম তাফসীরের (২১) পাঁচ দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২৮ জানুয়ারি বিকাল ৪টার দিকে মর্তুজা রায়হান ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে মিরপুর থেকে স্কুটার করে লালমাটিয়ায় আরাফাতের বাসায় নিয়ে যান। পরে আরাফাত, ওই শিক্ষার্থী ও রায়হান একসঙ্গে উবারে করে উত্তরার তিন নম্বর সেক্টরের প্যারাডাইস টাওয়ারের ‘বাম্বুসুট রেস্টেুরেন্টে’ যান। সেখানে আসামি নেহা, শাফায়েত জামিলসহ (২২) আসামিরা মদ পান করেন এবং ভিকটিমকে মদ পান করান।

একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ফারাহ মাধুরী অসুস্থবোধ করলে রায়হান তাকে মোহাম্মদপুরে বান্ধবীর বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে নুহাতের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে রায়হান ভিকটিমকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের পর রাতে ভিকটিম অসুস্থ হয়ে বমি করলে রায়হান তার আরেক বন্ধু অসিম খানকে ফোন দেয়। অসিম পরদিন এসে ভিকটিমকে প্রথমে ইবনে সিনা ও পরে আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করেন। দুইদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর মারা যান ফারাহ মাধুরী।

 

টাইমস/জেকে

Share this news on:

সর্বশেষ