পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এর কয়েক মিনিট পূর্বে নাটকীয়ভাবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজ বাতিল করলো নিউজিল্যন্ড।
১৮ বছর পর পাকিস্তানের মাটিতে খেলতে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড কিন্তু কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ হলো না ব্ল্যাক ক্যাপ্সদের। নিরাপত্তাজনিত কারন দেখিয়ে পাকিস্তান ত্যাগ করেছে কিউইরা। নিউজিল্যান্ডের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান রমিজ রাজা।
টুইটারে তিনি লিখেছেন, 'মাথা খারাপ করা একটা দিন! আমাদের সমর্থক ও খেলোয়াড়দের জন্য দুঃখ হচ্ছে। নিরাপত্তার হুমকির কথা বলে এককভাবে কোনো সফর বাতিল করাটা খুব হতাশাজনক। বিশেষ করে যখন তা আগে জানানোও হয় না! নিউজিল্যান্ড কোন দুনিয়ায় বাস করে! ওদের সঙ্গে আইসিসিতে দেখা হবে!'।
সম্প্রতি বাংলাদেশের সাথে ৩-২ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে পাকিস্তানে যায় নিউজিল্যান্ড দল। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রধান নির্বাহী ডেভিড হোয়াইট বিবৃতিতে বলেছেন, 'আমি বুঝতে পারছি, পিসিবির জন্য একটা বড় একটা ধাক্কা। তারা স্বাগতিক হিসেবে দারুণ ছিল। কিন্তু খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা সবার আগে এবং আমাদের বিশ্বাস, সেই দায়িত্বের জায়গা থেকে এ ছাড়া আর কোনো পথ ছিল না।'
পাকিস্তানের সাবেক পেসার শোয়েব আক্তার সিরিজ বাতিল নিয়ে একের পর এক টুইট করেছেন। প্রথম টুইটে তিনি লিখেছেন, 'নিউজিল্যান্ড এইমাত্র পাকিস্তানের ক্রিকেটকে হত্যা করল!' এরপর দুটি টুইটে নিউজিল্যান্ডের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনেছেন। শোয়েব লিখেছেন, 'কিছু পয়েন্ট নিউজিল্যান্ডকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত। ক্রাইস্টচার্চ হামলায় (২০১৯ সালে বাংলাদেশ দলের নিউজিল্যান্ড সফরের সময়) ৯ পাকিস্তানি মারা গিয়েছিলেন। তখনও পাকিস্তান কিন্তু নিউজিল্যান্ডের পাশে ছিল শক্তভাবে।'
শোয়েব আরও লিখেছেন, 'করোনা পরিস্থিতির মাঝেও পাকিস্তান দল নিউজিল্যন্ড সফরে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে নিউজিল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেছিল। (করোনাবিধি ভাঙায় পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের দেশ থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন এক কিউই মন্ত্রী।)' শোয়েব লিখেছেন, 'এই হুমকি তো যাচাই করা হয়নি। আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পর্যন্ত তাদের রাষ্ট্রপ্রধানকে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।'
শেষে শোয়েব বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ আয়োজনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি লিখেছেন, 'সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান কিন্তু সফলভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজ এবং পিএসএল আয়োজন করেছে।' অন্য একটি টুইটে 'রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস' লিখেছেন, 'আমরা অবশ্যই দ্রুত সময়ে এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাব। ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। এই প্রথম আমরা এরকম পরিস্থিতিতে পড়িনি। সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় এবং অযাচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিউজিল্যান্ড।'
টুইটারে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহিদ আফ্রিদি লিখেছেন, 'সব রকমের নিশ্চয়তা দেওয়ার পরও একটা গুজবের ওপর ভিত্তি করে তোমরা সফর স্থগিত করলে! নিউজিল্যান্ড, এর প্রভাব তোমরা বুঝতে পারছ?' পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম লিখেছেন, 'হুট করে সিরিজ স্থগিতের এমন সিদ্ধান্তে খুবই হতাশ। এ সিরিজটা পাকিস্তানের কোটি ক্রিকেট সমর্থকের মুখে হাসি ফোটাতে পারত। আমাদের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সামর্থ্য ও বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর পূর্ণ আস্থা আছে আমার। তারা আমাদের গর্ব, সব সময়ই থাকবে।'
পাকিস্তানি পেসার হাসান আলী লিখেছেন, 'এমন খবর পাওয়ার পর আমাদের সমর্থকেরা কেমন হতাশ হবেন, সেটা ভেবেই কষ্ট পাচ্ছি। বিশ্বকে আবারও বলতে চাই, আমাদের দেশ ক্রিকেটের জন্য নিরাপদ।'
এর আগে সিরিজ বাতিল করে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (এনজেডসি) বলেন, এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না তাদের, ‘নিউজিল্যান্ড সরকার নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক করার পর ব্ল্যাকক্যাপরা পাকিস্তান সফর বাতিল করছে। রাওয়ালপিন্ডিতে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে হওয়ার কথা ছিল আজ, এরপর লাহোরে পাঁচ ম্যাচ সিরিজ হওয়ার কথা। তবে পাকিস্তানকে নিয়ে নিউজিল্যান্ড সরকারের নিরাপত্তা হুমকি অবনতি হওয়া, মাঠে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের নিরাপত্তা কর্মকর্তার পরামর্শের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ব্ল্যাকক্যাপরা এ সফর চালিয়ে যাবে না। দলের পাকিস্তান ত্যাগ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’