অ্যাপসে যোগাযোগের মাধ্যমে দল গঠন করতেন ‘হিজরতকারীরা’

আল কায়েদা মতাদর্শে অনুপ্রাণিত ছয় ‘হিজরতকারী’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইনভিত্তিক অ্যাপসে যোগাযোগ তৈরির মাধ্যমে দল গঠন করতেন বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। আটককৃত ওই ছয় হিজরতকারী টেকনাফের স্থানীয় সহযোগীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে জঙ্গিবাদের জন্য টেকনাফে অবস্থান করছিলেন।

সোমবার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মো. আসাদুজ্জামান।

এর আগে রবিবার সিটিটিসির একটি দল রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, চট্টগ্রাম ও টেকনাফ এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।

আটককৃতরা হলেন- আব্দুর রব, মো. সাকিব, মো. শামীম হোসেন, মো. নাদিম শেখ, মো. আবছার এবং মো. সাইদ উদ্দিন ।

সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত আব্দুর রব একজন কোরআনে হাফেজ। তিনি কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে ২০১৯ সালের জুনে সৌদি আরব চলে যান। সৌদিতে অবস্থানকালে তিনি অনলাইনে বিভিন্ন জিহাদি পোস্ট ও ভিডিও দেখে জিহাদের জন্য অনুপ্রাণিত হন। অনলাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের একটি ভিডিও কমেন্টের সূত্র ধরে সাইদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একইভাবে শামীম, সাকিব, নাদিমসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। আব্দুর রব সমন্বয়ক হয়ে সবাইকে অনলাইনে একত্রিত করে শরীয়াহভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন, জিহাদ, প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। পরবর্তীতে তাদের অনলাইনে বিদেশে অবস্থানরত এক বাংলাদেশি সহযোগীর সঙ্গে পরিচয় হয় এবং অডিও-ভিডিও কলে যোগাযোগ স্থাপন করে। বিদেশে অবস্থানরত ওই ব্যক্তি সবাইকে হিজরত করে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। পরবর্তীতে সেই সদস্য লিবিয়ায় অবস্থানরত আরও একজন বাংলাদেশি এবং টেকনাফের স্থানীয় একজনের সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দেয়। সম্মিলিত আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় আব্দুর রব, শামীম, সাকিব, নাদিম, সাইদসহ অন্য যারা হিজরতে রাজি তারা প্রথমে টেকনাফ গিয়ে তাদের স্থানীয় সহযোগীদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নেবেন। পরবর্তীতে তারা বাংলাদেশে ইসলামি শাসন কায়েমের জন্য জিহাদ করবেন।

মো. আসাদুজ্জামান জানান, গত নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সবাইকে নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় টেকনাফে যাওয়ার পরামর্শ দিলে ১৬ নভেম্বর সাকিব ও নাদিম টেকনাফ যান এবং স্থানীয় সহযোগী ও আটককৃত আবছার তাদেরকে টেকনাফে ভাড়া বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেন। আব্দুর রব ছুটি না পাওয়ায় যথাসময়ে দেশে আসতে ব্যর্থ হলে তারা টেকনাফের বাসায় অবস্থান করে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

গত ২২ নভেম্বর আব্দুর রব দেশে আসলে তার সহযোগী শামীম ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের অন্য সহযোগী ভাড়া করা বাসায় নিয়ে যান। সেখানে অবস্থান করে বিভিন্ন পরামর্শ করেন। দুইদিন পর তারা দুইজন গ্রেপ্তারকৃত সাকিবদের সঙ্গে মিলিত হন এবং তাদের অন্য সহযোগীদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

আটককৃতদের বরাত দিয়ে সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইনভিত্তিক অ্যাপসে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দল গঠন করত। স্থানীয় সহযোগীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে জঙ্গিবাদের জন্য টেকনাফে হিজরত করে অবস্থান করছিল।’
আটককৃতদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানান এই উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা।

Share this news on: