মশা নিধনের পদ্ধতিতেই ভুল: মেয়র আতিকুল

ঢাকা শহরে মশা নিধনে যে প্রক্রিয়ায় কাজ করা হয়, তা ভুল পদ্ধতি বলে মনে করছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এত দিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। তাতে মশা তো ধ্বংস হয়নি। বরং অর্থের অপচয় হয়েছে।’

শনিবার (২১ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ বিভাগ। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি কর্মসূচির আওতায় মিয়ামি শহর সফর করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি প্রতিনিধিদল। ওই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন মেয়র আতিকুল। সেখানে মশা নিধন দেখে তার এমনটা মনে হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মশা নিধনে মিয়ামি শহর থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগাতে চান মেয়র আতিকুল ইসলাম। দ্রুত ঢাকা উত্তর সিটিতে মশার প্রজাতি চিহ্নিত করার জন্য একটি পরীক্ষাগার স্থাপন করবেন। মিয়ামি থেকে যে জ্ঞান অর্জন হয়েছে, এর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটিকে মশামুক্ত রাখতে চান।

আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, দেশে ফিরে মিয়ামি শহরে দায়িত্বরত সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে একটি সভার আয়োজন করবেন। তাঁরা (মিয়ামির কর্মকর্তারা) কীভাবে সফল হলেন, ঢাকায় সেটা কীভাবে প্রয়োগ করা যায়—তখন এর কর্মপদ্ধতি ঠিক করা হবে।
মেয়র বলেন, প্রয়োজনে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের পরীক্ষাগারেই মশার জীবনপ্রকৃতি নির্ণয়ে কাজ করা যেতে পারে। আর ফগিংয়ে (পরিপক্ব মশা নিধনে ধোঁয়া ছিটানো) অর্থ অপচয় না করে লার্ভিসাইডিংয়ে (লার্ভা নিধনে ওষুধ ছিটানো) মনোযোগী হতে হবে। মিয়ামি আর ঢাকার আবহাওয়া এবং মশার ধরন একই। তাই তারা সফল হলে অবশ্যই আমরাও সফল হব। এখন আর পিছিয়ে থাকার সময় নেই। উন্নত দেশের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে ঢাকাকেও মশামুক্ত করা সম্ভব।’

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কমার্শিয়াল ল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (সিএলডিপি) আমন্ত্রণ ও অর্থায়নে ঢাকা উত্তর সিটির এই প্রতিনিধিদল ফ্লোরিডা সফরে রয়েছে। বিবৃতিতে জানানো হয়, কর্মশালায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি শহরে প্রায় ৫২ প্রজাতির মশার অস্তিত্ব রয়েছে। ফলে সারা বছরই সেখানে মশাবাহিত রোগ—ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

মিয়ামিতে মশা ধ্বংস করার ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় মশার প্রজাতি নির্ণয়। মশার ধরন বুঝে ওষুধ ছিটাতে পারলেই কেবল মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ওষুধ ছিটিয়ে কোনোভাবেই মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে মিয়ামির ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, প্রথমে তারা মশার প্রজননস্থল খুঁজে বের করতে একটি দলকে দায়িত্ব দেয়। তারা খুঁজে খুঁজে মশার প্রজননস্থল থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা ও মশার ডিম সংগ্রহ করে। পরীক্ষাগার বিশেষজ্ঞরা মশা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে প্রজাতি নির্ধারণ করে দেন। এটি প্রথম ধাপ।

পরে মশার প্রজাতি অনুযায়ী পরিমিত পরিমাণে ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিধনের কাজ করা হয়। এ ক্ষেত্রে ফগিংকে গুরুত্ব না দিয়ে লার্ভিসাইডিংকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাদের মশক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার মোট বাজেটের ৮০ শতাংশই খরচ হয় লার্ভিসাইডিংয়ে। মিয়ামি কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ফগিং পুরোনো পদ্ধতি, এটা দিয়ে কখনো মশা মরে না।

Share this news on: