নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলায় দুই বাংলাদেশি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৮

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুইটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় বন্দুকধারীর গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আরও আট বাংলাদেশিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির কাছ থেকে খবর পাওয়া গেছে।

অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম সুফিউর রহমান এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আহত অনেক ব্যক্তিকে স্থানীয় কয়েকটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে ক্রাইস্টচার্চের আল নূর ও লিনউড মসজিদে এই হামলার ঘটনা ঘটে। মসজিদে নামাজ শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে একজন বন্দুকধারী সিজদায় থাকা মুসল্লিদের ওপর গুলি ছুড়লে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এম সুফিউর রহমান জানান, আমরা এখন পর্যন্ত দুজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে বলে শুনেছি। তবে তাদের নাম–পরিচয় সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত করে কিছু পাওয়া যায়নি।

নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। লিনউড মসজিদে ১০ জন এবং আল নূর মসজিদে ৩০ জন নিহত হয়েছেন।

নিউজিল্যান্ডের পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ দুই মসজিদে হামলায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে বলেন,  ‘তাদের তিনজন পুরুষ এবং একজন নারী।’

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন একে দেশের ‘সবচেয়ে কালো দিন’ বলে উল্লেখ করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আল নূর মসজিদে গুলি শুরু হলে তারা প্রাণ বাঁচাতে সেখানে থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। মসজিদের বাইরে রক্তাক্ত লোকজনকে পড়ে থাকতে দেখার কথাও জানান তারা।

পুলিশ লোকজনকে ওই এলাকার দিকে না যেতে সতর্ক করেছে। আল নূর নামের ওই মসজিদটি ডিন এভিনিউতে অবস্থিত এবং হেগলি পার্কের মুখোমুখি।

এই হেগলি পার্কেই অনুশীলন করছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। সেখানেই বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড দলের টেস্ট খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

তবে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের টুইটার পেইজে দেয়া এক পোস্টে জানানো হয় দুই দলের সম্মতিতে ১৬ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া সিরিজের তৃতীয় টেস্টটি বাতিল করা হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশ দলে ক্রিকেটাররাও লিখেছেন এই হামলার ঘটনার পর।

সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম লিখেছেন, ‘ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলার সময় আল্লাহ আজ আমাদের রক্ষা করেছেন...আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান।’

তামিম ইকবাল ফেসবুকে লিখেছেন ‘পুরো দল বন্দুকধারীদের হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছে। ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হলো, এবং সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মুখপাত্র জালাল ইউনুস বলেছেন, বাসে করে দলের বেশিরভাগ সদস্যই মসজিদে গিয়েছিল এবং ঠিক যখন হামলার ঘটনাটি ঘটে তারা মসজিদের ভেতর প্রবেশ করতে যাচ্ছিল।

তিনি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন,’তারা নিরাপদে আছে, কিন্তু মানসিকভাবে তারা হতবাক। আমরা তাদেরকে হোটেল থেকে বের না হওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’

ঘটনার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সব খেলোয়াড়রা নিরাপদ আছেন জানিয়ে দলের টুইটার পেইজ থেকে পোস্ট দেয়া হয়।

ক্রাইস্টচার্চের সব স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ।

ঘটনার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের খবর সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা সাংবাদিক মোহাম্মদ ইসাম টুইটারে লিখেছেন, ‘তারা (ক্রিকেট দল) হেগলি পার্কের কাছে একটি মসজিদে বন্দুকধারীর হামলার ঘটনা থেকে বাঁচতে পেরেছেন।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা একজন বন্দুকধারীর হাত থেকে নিজেদের জীবন বাঁচার জন্য প্রাণভয়ে দৌড়াচ্ছিলেন বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।

মোহন ইব্রাহীম নামে একজন নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে বলেছেন, ‘শুরুতে আমরা ভেবেছিলাম এটা হয়তো বৈদ্যুতিক শকের কোনও ব্যাপার, কিন্তু একটু পরেই সবাই দৌড়াতে শুরু করল।’

আরও একটি মসজিদ থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

ক্যাথেড্রাল স্কয়ারে হাজার খানেক শিশুর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় পদক্ষেপ নেয়ার দাবিতে শোভাযাত্রা হওয়ার কথা ছিল, সেখান থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ বলেছেন, ‘ক্রাইস্ট-চার্চে একজন বন্দুকধারীর হামলার কারণে গুরুতর এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির রূপ নিয়েছে।’

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ তার সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করছে, কিন্তু এখনো এখানে অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে।

পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বেরুতে এবং রাস্তায় নামতে নিষেধ করা হয়েছে এবং পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত স্কুলও বন্ধ থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

 

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: