ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে রাতভর নির্যাতনের শিকার নবীন ছাত্রী ফুলপরী খাতুন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে উঠেছেন।
রবিবার (১২ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে তার বাবা আতাউর রহমানের সঙ্গে ক্যাম্পাসে আসেন তিনি। এরপর নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের বকুল ব্লকের ৫০১ নম্বর কক্ষে ওঠেন তিনি।
এর আগে গত ৪ মার্চ বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সেলিনা নাসরিন ফুলপরীকে শেখ হাসিনা হল থেকে স্থানান্তরিত করে তার পছন্দ মত বঙ্গমাতা হলে আসন বরাদ্দ দেন।
গত ১ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ভুক্তভোগী ফুলপরীর পছন্দসই হলে আবাসিকতা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফুলপরীর পছন্দ মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে তার আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিয়া মো. রাসিদুজ্জামান বলেন, 'ফুলপরীকে আগেই সিট বরাদ্দ দেওয়া হলেও আজ সে তার জিনিসপত্র নিয়ে হলে উঠেছে। হলে তার পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ তার প্রাপ্য সকল সুবিধা দেওয়া হবে'
এ বিষয়ে ফুলপরী খাতুন বলেন, 'আমার দারুণ অনুভব হচ্ছে, কেন জানি ক্যাম্পাসের প্রথম দিনের অনুভূতি পাচ্ছি। আগামীকাল (সোমবার) থেকে ক্লাস শুরু করবো। আজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়েছে। সামনের দিনগুলোতে যেন কোনো অসুবিধায় না পড়ি সেদিকে খেয়াল রাখার দাবি জানাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে'
প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র ধারণা করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত
১৪ ফেব্রয়ারি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এ ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় উচ্চ আদালত তদন্ত কমিটি গঠন করে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়, হল ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনগুলোতে ঘটনার সত্যতা মিললে হল প্রশাসন ও ছাত্রলীগ থেকে জড়িত ৫ জন সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, তাবাসসুম ইসলাম, হালিমা খাতুন ঊর্মি ইসরাত জাহান মিম এবং মোয়াবিয়া জাহানকে হল ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করে।
এছাড়া গত বুধবার (১ মার্চ) উচ্চ আদালতের আদেশে নির্যাতনে জড়িত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, তাবাসসুম ইসলাম, হালিমা খাতুন ঊর্মি ইসরাত জাহান মিম এবং মোয়াবিয়া জাহানকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া হল প্রভোস্টকে অব্যাহতি ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফুলপরীকে ইবির যে কোনো হলে পছন্দ মতো সিট দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এ আদেশের পর গত ৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে অভিযুক্তদের সাময়িক বহিষ্কার এবং ৭দিনের মধ্যে কেনো তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না সেই মর্মে কারণ দর্শানোর আদেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হল প্রভোস্ট শামসুল আলমকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।