আবার একসঙ্গে শাফাত-পিয়াসা

বনানী রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে শাফাত আহমেদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা।

বুধবার শাফাতের সঙ্গে অন্তরঙ্গ দুটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন ফারিয়া। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ টাইমস এর কাছে পিয়াসা স্বীকার করেছেন স্বামীকে তিনি গ্রহণ করেছে। তারা এখন একসঙ্গেই আছেন।

ফারিয়া বাংলাদেশ টাইমসকে জানান, ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি শাফায়াতকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর গুলশানে শ্বশুরের বাসায় স্বামীকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। বিয়ের এক সপ্তাহ পর তিনি ও তার স্বামী বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে থাকা শুরু করেন। গত বছরের ৩১ নভেম্বর শাফাত ধর্ষণ মামলায় জামিনে ছাড়া পান। ৫ ডিসেম্বর তিনি আবার শ্বশুরবাড়িতে যান। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই মামলায় স্বামী শাফাতের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান আদালত। তারপর ৫ ডিসেম্বর তিনি বসুন্ধরার ফ্ল্যাটে চলে আসেন। এখন তিনি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলেও জানান।

শাফাতের সঙ্গে তার সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য শ্বশুর দিলদাল আহমেদকে দায়ী করেন ফারিয়া। শ্বশুর সম্পর্কে ফারিয়া বলেন, ‘এসব ঘটনার পেছন শাফায়াতের বাবা। তিনি মদ আর নারী নিয়ে সবসময় পড়ে থাকেন।’

জন্মদিনের পার্টির কথা বলে ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ রাতে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই তরুণীকে ধর্ষণ করেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে শাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফ। রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে ৬ মে বনানী থানায় মামলা হয়। এরপর ২০১৭ সালের ৮ জুন শাফাত আহমেদ, তার বন্ধু নাঈম আশরাফ ওরফে আবদুল হালিমসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। অপর তিনজন আসামি হলেন শাফাতের বন্ধু সাদমান সাকিফ, গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও তার দেহরক্ষী রহমত আলী।

মামলায় অভিযুক্ত শাফাত আহমেদ এখন কারাগারে। ওই মামলা ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

শাফাত-ফারিয়া সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

দুই বছর প্রেমের পর ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা ও শাফাত আহমেদ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। এরপর গত ২০১৭ সালের ৮ মার্চ হঠাৎ বিয়ে বিচ্ছেদের চিঠি পাঠিয়ে ভারতে চলে যান শাফাত। তারপর এক মাস পার হওয়ার আগেই তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে।

শাফাতের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর গণমাধ্যমে ফারিয়া বলেছিলেন, ‘শাফাত আমাদের ডিভোর্সের কথা কাউকে বলত না। আমার বিরুদ্ধে অনেক মেয়েকে খারাপ কথা বলে তাদের মনোযোগ কাড়তে চাইত। ধর্ষণের পর ভিকটিমরা আমাকে বলেছে, ওই রাতে বারবার ইয়াবা খেয়ে ওরা ধর্ষণ করেছে, গালাগাল করেছে, মারধর করেছে, ভিডিও করেছে। ওরা কেউ আমাদের ডিভোর্সে কথা জানত না।’

শাফাতের বাবা দিলদার আহমেদ ধর্ষণ মামলা দায়ের পর গণমাধ্যমে বলেন, এই মামলার সঙ্গে শাফাতের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী জড়িত।

পরে গণমাধ্যমে তালাকের কথাটি অস্বীকার করে বক্তব্য দেন ফারিয়া। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। ওই মেয়েদের সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় নেই। একবার এক রেস্টুরেন্টে আমি আর শাফাত একসঙ্গে ছিলাম। তখন শাফাতের বন্ধু এ মামলার আরেক আসামি সাদমান ওই দুই মেয়েকে নিয়ে আসে। সে জানত না আমরা দুজন এখানে আছি। দেখে একটু ইতস্তত হন সাদমান। কারণ সে শাফাতকে বড় ভাইয়ের মতো জানত। আমরা দেখে ফেলায় সে এগিয়ে আসে এবং তার দুই বান্ধবীকে পরিচয় করিয়ে দেয়। এরপর আর কখনো ওই দুই মেয়েকে আমি দেখিনি।’

পিয়াসা দাবি করেন, ‘ধর্ষণের এক সপ্তাহ পর দুই মেয়ে আমাকে কল দিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে। তারা জানায়, আমার স্বামী শাফাত বন্ধুদের নিয়ে তাদের ধর্ষণ করেছে। এর আগে আমার নামে বাজে বাজে সব কথা বলে ওদের মন গলানোর চেষ্টা করে সাফাত। কাঁদতে কাঁদতে দাম্পত্য জীবনে সে (শাফাত) আমার জন্য সুখী নয় বলে গল্প শোনাতে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা তো ভিন্ন। আমিই ওকে নিয়ে সুখী হতে পারছিলাম না। ওকে শোধরানোর চেষ্টা করেছি, পারিনি। কিন্তু পাপ তাকে গ্রাস করে নিল।’

তিনি আরো বলেন, এ মামলায় তার কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি বরং দুটি মেয়েকে ধন্যবাদ দেব, তারা সাহস দেখিয়েছে ভদ্রবেশী শয়তানদের মুখোশ খুলে দিতে। ছেলের বিরুদ্ধে যখন ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, বনানী থানার ওসিকে দিয়ে ওর বাবা কৌশলে আমার নামটা বসিয়ে দিয়েছেন।’

 শ্বশুরের বিরুদ্ধে ফারিয়ার মামলা

শ্বশুর আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমসহ দুজনের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে ঢাকার আদালতে সোমবার(২০১৯ সালের ১১ মার্চ) মামলা করেছেন ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা। ঢাকার মহানগর হাকিম মো. তোফাজ্জল হোসেন ওই নারীর অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন। এই মামলায় অপর আসামি হলেন আপন রিয়েল এস্টেট কোম্পানির উপদেষ্টা মোখলেছুর রহমান।

মামলার আরজিতে ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা বলছেন, আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে শাফাত আহমেদের সঙ্গে তার বিয়ে হয় ২০১৫ সালে। বিয়ের পর গুলশানে শ্বশুরের বাসায় স্বামীকে নিয়ে বসবাস করেন। তিনি এখন দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বিয়ের পর শ্বশুর চাননি যে তার স্বামীর সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক অটুট থাকুক। তার শ্বশুর শুরু থেকে তাকে মানসিক নির্যাতন করে আসছিলেন। তার স্বামী অনৈতিক কাজে লিপ্ত হলে তিনি বাধা দেন। কিন্তু শ্বশুর কোনো বাধা দেননি। পরোক্ষভাবে অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করেছেন শ্বশুর। উল্টো তাকে তালাক দেওয়ার জন্য শাফাতকে নানাভাবে চাপ দেন। তাকে তালাক না দিলে শাফাতকে ত্যাজ্যপুত্র করারও হুমকি দেন। এমনকি সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত করার হুমকি দেন শ্বশুর দিলদার আহমেদ।

মামলায় ফারিয়া মাহাবুব আরও দাবি করেছেন, তার স্বামী শাফাত আহমদে (বনানীর রেইনট্রিতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি) একটি মামলায় কয়েক মাস জেলহাজতে ছিলেন। তখন তার শ্বশুর তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। গত বছরের ৩১ নভেম্বর শাফাত ওই মামলায় জামিনে ছাড়া পান। শ্বশুরের নির্যাতনের ঘটনা স্বামীকে বলেন। এ কথা জানতে পেরে তার শ্বশুর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই মামলায় স্বামী শাফাত আহমেদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান আদালত। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর পেয়ে শ্বশুর দিলদার আহমেদ তাকে গর্ভপাত করানোর জন্য চাপ দেন। ৬ মার্চ রাত ১০টার দিকে শ্বশুরের বাসায় প্রবেশের সময় দিলদার ও অপর আসামি মোখলেছুর তাকে উদ্দেশ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তখন তার কাছে থাকা দুই লাখ টাকাসহ স্বর্ণালংকার তারা ছিনিয়ে নেন। শ্বশুর তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। বের না হলে হত্যারও হুমকি দেন তিনি।

 

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: