আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। আইনমন্ত্রী বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) সমস্যা দূরীকরণে আলোচনা চলছে। আইনটি যাতে আরও ভালো করা যায়, যে সমালোচনা হচ্ছে- তা যাতে দূর করা যায়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন নাগরিক সমাজের পাঁচজন প্রতিনিধি। তারা হলেন- ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সিআর আবরাব, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, রেজাউর রহমান লেনিন, সাইমুম রেজা তালুকদার ও শারমীন খান।
এই বৈঠকে সরকারের পক্ষে আইনমন্ত্রী ছাড়াও তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ একাধিক সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইন নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও সময়ের অভাবে তা আজ হয়নি। এ ছাড়া প্রস্তাবিত এই আইনের নতুন একটি খসড়া আজকেই ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য এটি আরও পর্যালোচনা করে আগামী ৬ এপ্রিল তা নিয়ে আবারো বৈঠক হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ৩০ মার্চ আবারো বৈঠক হবে।
বৈঠক শেষে প্রথমে নিজেদের অবস্থানের কথা তুলে ধরেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে গণমাধ্যমসহ নাগরিকদের বড় ধরনের উদ্বেগ আছে। আইনমন্ত্রীও তার আলোচনায় বলেছেন অনেক ক্ষেত্রে এটির অব্যবহার হয়েছে। সার্বিকভাবে তাদের (নাগরিক সমাজ) অবস্থান হলো তারা মনে করেন আইনটি বাতিল করা দরকার। এর বিকল্প নেই। কারণ মৌলিক যে ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং উদ্বেগের জায়গা আছে এবং অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে তারা মনে করেন এটিকে ঢেলে সাজালেও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এ সময় ইফতেখারুজ্জামানের পাশে আইনমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) সমস্যা দূরীকরণে আলোচনা চলছে, সেখানে সব পক্ষের কথা শোনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আইনটি মূলত সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করা হয়েছে, সেখানেই আমরা থাকতে চাই।
এই আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা সবাই বলছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনটি যাতে আরও ভালো করা যায়, যে সমালোচনা হচ্ছে, তা যাতে দূর করা যায়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, আজ মূলত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তারা (নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ) তাদের প্রস্তাবনার আলোকে যুক্তি আজ পেশ করেছেন। সোয়া দুই ঘণ্টা তাদের বক্তব্যই মূলত আমরা শুনেছি।
তিনি বলেন, ডিএসএ’র যেসব সমস্যা আছে, তা দূর করার জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই আইনের কোনটা কোনটা পরিবর্তন দরকার এবং কোনটা কোনটা সঠিক আছে, সেটা আমরা আজকের সভায় তুলে ধরিনি। তার কারণ হচ্ছে, আমরা আজ সেই সময় পাইনি। সেজন্য আমরা আবারো ৩০ মার্চ বেলা ১১টার সময় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা কন্টিনিউ করব। সেই দিন ইনশাআল্লাহ, সমাপ্তি হবে বলে আমার মনে হয়।
আইনমন্ত্রী বলেন, আজ দুটি আইন নিয়ে আলাপ করার কথা ছিল। একটা হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, আরেকটা হচ্ছে ডেটা প্রোটেকশনন অ্যাক্ট। যেহেতু ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্টের একটা নতুন ড্রাফট হয়েছে, আজ ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে, তারা (নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি) সেটা দেখে আসেননি। সে কারণে মিউচ্যুয়াল আলোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত পৌঁছেছি ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট নিয়ে আগামী ৬ এপ্রিল বসব। সেখানে সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, আমি যতটুকু জানতে পেরেছি আগের মিটিংয়ে যেসব সাজেশন দেওয়া হয়েছিল তার অনেকগুলোই সেখানে কনসিডারেশন করা হয়েছে।
বৈঠকে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবির, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, আইসিটি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
