হাইকোর্টের আদেশের সাত মাস পরেও কমিটি করেনি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর

আরবান স্টাডি গ্রুপের (ইউএসজি) করা এক রিট আবেদনের রায়ে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ২২শ ভবন না ভাঙতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে প্রতিটি ভবন পরীক্ষার জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠনের জন্য বলা হয়েছিল।

এছাড়া তিন মাস অন্তর অন্তর কী অগ্রগতি করা হয়েছে তাও কমিটির প্রতিবেদনে জানাতে বলা হয়। 

২০১৮ সালে ১৩ আগস্টের ওই রায়ের পর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো কমিটি গঠন করেনি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

ভবনগুলো পরীক্ষার জন্য কবে কমিটি গঠন করা হবে তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, ওই সময় বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন- ঢাকা শহরে অনেক ভবন রয়েছে, যা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ও মোঘল আমলের তৈরি। এসব স্থাপনা আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী। জাতীয় স্বার্থেই এসব ঐতিহ্য রক্ষা করা প্রয়োজন।  

হাইকোর্টে রিটকারী আরবান স্ট্যাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, ‘আমরা হাইকোর্টে এই রিট দায়ের করেছিলাম। হাইকোর্ট এ বিষয়ে খুব যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের এই হেরিটেজ ভবনগুলো সংরক্ষণের দায়িত্ব। কিন্তু এই রায়ের পরেও রাজউক অনেক ভবন ভেঙে ফেলার অনুমতি দিচ্ছে। তাই আমরা হাইকোর্টের রায়ের উকিলের সার্টিফায়েড কপি নিয়ে জিডি করেছি। আর অনেক জায়গায় ভবন ভাঙার হাত থেকে আংশিক রক্ষা করতে পেয়েছি।’

এ ব্যাপারে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (ঢাকা বিভাগ) রাখী রায় বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, ‘আমাদের হাতে হাইকোর্টের লিখিত আদেশ আসেনি। আসলে অবশ্যই কমিটি করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কমিটি করবো। তবে পূর্বের কমিটির মতোই হবে। কারণ এরা ছাড়া আর কে এই সব ভবন নিয়ে কাজ করবে? বেশি যদি হয় তবে সময় চেয়ে নেবো। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা সেই রিটের প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আর এই রিটের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল হবে, তারও প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

আমাদের নতুন মহাপরিচালক এসেছেন, তার সাথে বিস্তারিত আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো বলে জানান রাখী রায়।

সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেন অবসর গ্রহণ করেছেন। তার পরিবর্তে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য) নিজাম উদ্দিনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মহাপরিচালক হিসেবে।

এ বিষয়ে নতুন মহাপরিচালকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, ‘আপনি এ বিষয়ে ডিডি রাখী রায়ের কাছে ফোন দেন তো’।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক আমিরুজ্জামান বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে অবগত নই। তবে এই মামলা ও মোকদ্দমা বিষয়ে বলতে পারবে উপ-পরিচালক (প্রশাসন), উপসচিব স্যার গাজী মো. ওয়ালি-উল-হক। কারণ তিনি এই বিষয়টি দেখেন তো।’

এ ব্যাপারে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) গাজী মো. ওয়ালি-উল-হকের কাছে কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি হেরিটেজের রিট সম্পর্কে কিছুই জানি না। এ সম্পর্কে আমার ধারণা নেই।’

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে ঢাকা মহানগরীর ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ও এলাকার তালিকা প্রণয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করে প্রাথমিকভাবে ৯৪টি ভবন ও ৪টি অঞ্চলের আওতায় ১৩টি সড়ককে সংরক্ষিত ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার।

পরবর্তীকালে ২০১৭ সালে রাজউক ৭৫টি ভবনের একটি তালিকা করে গেজেট প্রকাশ করে। এরপর আর কোন ভবন আজ অবধি নতুন করে তালিকাভুক্তি করা হয়নি।

ফলে পুরান ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী অনেক স্থাপনা নির্বিচারে ধ্বংস করে ফেলার কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকে। ফলে তালিকায় স্থান পাওয়ার দাবিদার প্রায় কয়েক হাজার সংরক্ষণযোগ্য ভবনের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়ে। পরে ২০১২ সালে সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকা জেলা পরিষদ ভবনটি ভেঙে সেখানে নতুন ভবন করা হয়। ওই ভবনটি ভেঙে ফেলার সময় হাইকোর্টে রিট করে আরবান স্টাডি গ্রুপ।

ওই রিটের রায়ে হাইকোর্ট ঢাকা মহানগরীসহ সমগ্র বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার তালিকা প্রণয়নের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। ওই রায়ের আলোকে ২০১৪ সালে গঠিত হয় হেরিটেজ কমিটি। ইউএসজি’র সম্পন্ন করা তালিকার ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ তালিকাটি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়।

২০১৬ সালের মাঝামাঝি নাগাদ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্য একটি খসড়া তালিকাও প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু কমিটি অকার্যকর করে দেওয়ায় ওই তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

ঢাকা মহানগরী বিশেষ করে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ধ্বংসের বিষয়টি বৃদ্ধি পাওয়ায় হাইকোর্টে রিট করেন তাইমুর ইসলাম।

রিটে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর অসংরক্ষিত ভবনগুলিকে দ্রুত তালিকাভুক্ত করে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি।

 

 

টাইমস/টিআর/জেডটি

Share this news on: