‘হত্যার’ একযুগ পর জীবিত ফিরলেন গৃহবধূ

২০০৬ সালের ১ জুন নোয়াখালী সুধারাম থানায় (তৎকালীন) যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে নির্যাতন করে ‘হত্যা ও লাশ গুমের’ অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়। একই বছরের ৩০ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশ। অভিযোগপত্র দায়েরের ১২ বছরের বেশি সময় পর ‘গুম’ হওয়া ওই গৃহবধূর সন্ধান পেয়েছে পুলিশ।

সোমবার রাত সোয়া আটটার দিকে ওই গৃহবধূকে কোম্পানীগঞ্জের উড়িরচর এলাকা থেকে আটক করে কবিরহাট থানায় সোপর্দ করেন মামলার আসামিরা। ওই নারীর নাম খতিজা খাতুন (৪০)। তিনি ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের নবগ্রামের সুলতান আহম্মদের মেয়ে।

পরে পুলিশ এ–সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) ওই নারীকে মঙ্গলবার নোয়াখালীর ৪ নম্বর আমলি আদালতে হাজির করে। আদালতের বিচারক ২২ ধারায় ওই নারীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার পর তাকে নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ১ জুন তৎকালীন সুধারাম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করা হয়। যাতে উল্লেখ করা হয়, যৌতুকের জন্য খতিজা খাতুনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে এবং তার লাশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই অভিযোগে খতিজার ভাই আবুল কাশেম বাদী হয়ে ওই নারীর স্বামী মো. দুলাল, শাশুড়ি ফুলবানু, শ্বশুর সাইদুল হকসহ পরিবারের ১০ সদস্যকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। পরে একই বছরের ৩০ আগস্ট সুধারাম থানার তৎকালীন এসআই মনু সোহেল ইমতিয়াজ মামলার তদন্ত শেষে এজাহারে উল্লেখিত ১০ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

ওই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, তদন্তকালে নির্যাতিত ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়নি। তাকে (ভিকটিম) নির্যাতন করে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন এবং একাধিক সাক্ষীর জবানবন্দির বরাত দেন অভিযোগপত্রে।

সূত্র জানায়, সোমবার মামলার আসামিপক্ষের লোকজন পার্শ্ববর্তী কেম্পানীগঞ্জ উপজেলার উড়িরচর এলাকায় ‘হত্যা ও গুম হওয়া’ খতিজার সন্ধান পান। তারা তাকে সেখান থেকে ধরে রাত সোয়া আটটার দিকে কবিরহাট থানায় নিয়ে আসেন। পরে থানায় খতিজা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন ২০০৬ সালে তার বাবা-ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা তাকে চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেন। সেখানে তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করতেন।

খতিজার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, দুই দিন আগে তিনি কোম্পানীগঞ্জের চর এলাহী এলাকার এক আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে আসেন। বিষয়টি তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন জেনে গেছেন শুনে তিনি সোমবার সকালে উড়িরচর চলে যান। সেখান থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে থানায় নিয়ে এসেছেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ফাঁসানোর জন্যই তার পরিবার ওই মামলা করেছে বলেও তিনি স্বীকার করেন।

কবিরহাট থানার ওসি মির্জা মোহাম্মদ হাছান বলেন, যখন মামলাটি হয়েছে তখন কবিরহাটের ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন ছিল সুধারাম থানার অধীন। তাই মামলাটি ওই থানায় হয়েছে এবং তদন্তকারী কর্মকর্তাও ওই থানার।

এ বিষয়ে সুধারাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০০৬ সালের ওই মামলাটি যে তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই মনু সোহেল ইমতিয়াজ) তদন্ত করেছেন তিনি এরই মধ্যে চাকরি ছেড়ে দিয়ে পরিবারসহ কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রে মামলার বাদী ও সাক্ষীরাই বেশি দোষী বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 


টাইমস/এইচইউ

Share this news on: