প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করা।’ বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল উজরা জেয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন তিনি। জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে এ বৈঠক হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। বৈঠকে বিভিন্ন বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানান তিনি।
বৈঠকে উজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তারা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জন্য ১১ দশমিক ৬০ কোটি ডলার বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেয়া রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করতে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেন। এ সময় মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করার আগে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা উচিত। অন্যথায়, এই অঞ্চল নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে। কারণ, রোহিঙ্গারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান ও মাদক কারবারি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। কারণ, তাদের প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। তারা সেখানে কোনো ভবিষ্যৎ অনুভব করছেন না।’ এ সময় আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) করা মামলায় আন্তর্জাতিক সমর্থনও চান সরকারপ্রধান।
বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। উজরা জেয়া বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অহিংস নির্বাচন চায়।’
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সরকারও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সহিংসতামুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা প্রযোজন। আমরা জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি। জনগণের ভোট ছাড়া কেউ ক্ষমতায় আসতে পারে না। ভোট কারচুপির মাধ্যমে কেউ ক্ষমতায় এলে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। দেশের সংবিধান অনুযায়ী যথা সময়ে জাতীয় নির্বাচন হবে।’
আগামী সাধারণ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনি পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, ‘আগামী সাধারণ নির্বাচনে আমরা বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাই। যদিও ভারত, যুক্তরাষ্ট্র্র ও যুক্তরাজ্যসহ বেশিরভাগ দেশই নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অনুমতি দেয় না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশিরা কিছু ভালোভাবে বর্ণনা করলে ভালো হবে, অন্যথায় ভুল হবে। আমরা বিদেশিদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে দেশ চালাতে চাই না।’
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন জাতিসংঘের গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ দূত অ্যালিস ওয়াইরিমু এনদেরিতু। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি মিয়ানমারে গণহত্যার বিচার অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘের সহযোগিতা চেয়েছেন।