উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে নৌকায় ভোট দিন : শেখ হাসিনা

দেশের উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন।

শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে মাদারীপুরের কালকিনিতে নির্বাচনী জনসভায় অংশ নিয়ে তিনি এই আহ্বান জানান।

এর আগে, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কালকিনির সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ মাঠের জনসভামঞ্চে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।

নৌকাকে দেশের উন্নয়নের একমাত্র হাতিয়ার উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৫ বছরে বাংলাদেশ অনেক বদলে গেছে। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই এই উন্নয়নটা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নয়, বিদেশিদের কাছে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ অনেক বদলে গেছে। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই এই উন্নয়নটা হয়েছে।

বিএনপির অরাজকতা ও দুঃশাসনের কারণে দেশে জরুরি অবস্থা (ইমার্জেন্সি) ঘোষণা হয়েছিল বলে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় ২০০১ সালের নির্বাচন। ১ অক্টোবর নির্বাচনে জয়লাভের পর যেভাবে অত্যাচার করা শুরু করছিলো ওই বিএনপি। ক্ষমতা হস্তান্তরের সঙ্গে সঙ্গে তারা ১৩ জন সচিবকে ওএসডি করে দেয়। শত শত অফিসারের চাকরি চলে যায়। এইভাবে অত্যাচার শুরু হয়। বিএনপির শাসনামল ছিল সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, গ্রেনেড হামলা, সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য সৃষ্টি করছিলো। দুর্নীতিতে সারা বিশ্বের কাছে ৫ বার সেরা হয়। তাদের অরাজকতা, দুঃশাসনের কারণে ইমার্জেন্সি আসে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নির্বাচন হচ্ছে সারা বাংলাদেশে। ৭ জানুয়ারি ২০২৪ সাল, আমরা ৫ বছর পূর্ণ করেছি, আবার নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। মাদারীপুর বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিপূর্ণ জায়গা। চাকরির সূত্রে আমার দাদা এখানে কাজ করতেন। আমার বাবা এখানে পড়াশোনা করেছেন। আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি, এই জায়গাটা একসময় অন্ধকার ছিলো, এখন আর সে সময় নেই। জাতির পিতা শুধু স্বাধীনতায় দেননি, তিনি আমাদের একটা সংবিধানও দিয়েছেন।

তিনি বলেন, অবৈধ ক্ষমতা দখল করে মিলিটারি ডিক্টেটর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। এই দেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৯১ মার্কিন ডলার, মাত্র ৩ বছর ৭ মাসের মধ্যে সে মাথাপিছু আয় ২৭৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছিলেন জাতির পিতা। কিন্তু ৭৫ এর পরে জিয়া-এরশাদ যারা ক্ষমতায় এসেছে মাথাপিছু আয় কিন্তু বাড়ায়নি। তারা সমস্ত অর্থ সম্পদ দিয়ে একটি এলিট জনগোষ্ঠী তৈরি করে জনগণের ভোট চুরি করে হ্যাঁ, না ভোট করে। একদিকে সেনা প্রধান, আরেকদিকে রাষ্ট্রপতি বেআইনিভাবে সংবিধান বিরোধীভাবে ব্যবহার করে একটি নির্বাচনী প্রহসন করে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়। তারই উচ্ছিষ্ট থেকে তৈরি হয় বিএনপি নামক সংগঠন।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়। ভোট চুরির কলঙ্ক মাথায় নিয়ে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করে বিদায় নিয়েছিলো। এর পরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে। আমরা ক্ষমতায় এসে ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি পেয়েছি। ঘরে ঘরে হাহাকার। মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, ঘর নেই, পরনে কাপড় নেই। চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। সবার ঘরে অন্ধকার। দেশের এই দুরাবস্থায় আমরা ক্ষমতায় নেই। ৫ বছর আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। এর মধ্যে ৪০ লাখ মেট্রিক টন পূরণ করে ২৬ লাখ মেট্রিক টন গোলায় রেখে যায়। বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাটি উর্বরতার কারণে আমরা নিজেদেরটা নিজেরা উৎপাদন করতে পারি। আমাদের মানুষ আছে, তাই কারও কাছে হাত পাততে হয় না। আর যেসব জিনিস আমাদের নেই তা আনতেই হবে। অন্য যা যা প্রয়োজন আমরা নিজেরাই করতে পারি। এরফলে কোনো জমি অনাবাদি থাকবে না। যার যতটুকু জমি আছে, আপনাকে উৎপাদন করতেই হবে। আমি নিজে যে বলছি তা নয়, আমি নিজে করে বলছি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, গণভবন এখন আর শুধু প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নয়, এটি এখন একটা ফার্ম হাউজ হয়ে গেছে। সেখানে আমরা সবই উৎপাদন করি। শুধু তাই নয়, আমার দাদার জমি যা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি; সেখানে অনেক জমি পতিত ছিল, সব জায়গা চাষের আওতায় নিয়ে এসেছি।

পাশাপাশি এলাকার মানুষের সমস্ত জমি যেহেতু চাষবাস হয় আমরা সেই ব্যবস্থা করেছি। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের অগ্রগতি। আমরা সেই তারুণ্যকেই স্মার্ট তরুণ সমাজ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়তে চাই। কারণ আমাদের লক্ষ্য আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা স্মার্ট পপুলেশন। আমাদের সরকার হবে স্মার্ট, আমাদের ইকোনমি হবে স্মার্ট, আমাদের সমাজ হবে স্মার্ট।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে জনসভায় মাদারীপুর-১ আসনের নৌকার প্রার্থী নূর-ই-আলম চৌধুরী, মাদারীপুর-২ আসনের নৌকার প্রার্থী শাজাহান খান, মাদারীপুর-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মাদারীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুনীর চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালকিনি, ডাসার ও সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসন। এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার তিনি দ্বিতীয়বারের মতো এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শক্ত অবস্থানে রয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম।

উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালে কালকিনির ভুরঘাটায় (মজিদ বাড়ী), ১৯৮৮ সালে কালকিনি পাইলট স্কুল মাঠে, ১৯৯১ সালে কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ মাঠে, ২০০১ সালে কালকিনির গোপালপুর-ভুরঘাটায় জনসভা ও পথসভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে জনসভাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সাদা পোশাকের পুলিশ, থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশসহ কাজ করে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে কালকিনি উপজেলা সদরকে জনসভা মঞ্চ আশপাশের এলাকায় দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় আসনের নৌকার প্রার্থীর ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে।

এর আগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার জনসভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Share this news on: