আজ পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ। প্রায় অর্ধশতাব্দী পর বিরল সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বিশ্ব। চার মিনিটের অন্ধকার দেখার অপেক্ষায় উত্তর আমেরিকার কোটি মানুষ। তবে মেক্সিকো, আমেরিকা ও কানাডায় দেখা যাবে সূর্যগ্রহণ। ইতিমধ্যে বিরল এ সূর্যগ্রহণ দেখতে প্রস্তুত এসব দেশের কোটি মানুষ। তবে আশঙ্কা রয়েছে বিরল এই সূর্যগ্রহণটি মেঘ ও বজ্রঝড়ে ঢাকা পড়তে পারে। উত্তর আমেরিকার স্থানীয় সময় আজ দুপুর বেলাতেই আকাশে নজর টানবে দুই গ্রহ, শুক্র ও বৃহস্পতি। সব মিলিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানের জন্য এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
ভারতীয় সময়ে রাত ৯টা ৩২ মিনিটে শুরু হবে। আর শেষ হবে দুইটা ৫২ মিনিটে। তবে এর মধ্যে পূর্ণগ্রাস থাকবে চার মিনিট। কারো কারো মতে আবার সাত মিনিট। কিন্তু এই গ্রহণ বাংলাদেশ থেকে দেখা যাবে না। কারণ এটি যে সময়ে হবে, সেই সময়ে বাংলাদেশের আকাশে সূর্য নেই। কারণ সেই সময়ে রাত। তাই এটি বাংলাদেশ বা এশিয়ার অন্য জায়গা থেকে দেখা যাবে না।
পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ বিরলতম ঘটনা। একটি পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ অত্যন্ত নাটকীয় একটি বিষয়। এতে চাঁদ সম্পূর্ণরূপে সূর্যকে ঢেকে দেয়। চাঁদ যখন সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলে তখন তাকে বলা হয় পূর্ণগ্রাস। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে। চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। অনেক সময়ে চাঁদ পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যে চলে আসে। এ কারণে সূর্য থেকে পৃথিবীতে আসা আলো কিছু সময়ের জন্য বাধাগ্রস্ত হয়। একেই সূর্যগ্রহণ বলা হয়। এই ঘটনাটি মহাকাশ থেকে দেখা গেলে পৃথিবীতে একটি বিশাল ছায়া দেখা যাবে, যা হবে চাঁদের ছায়া। সূর্যগ্রহণ তিন প্রকার। পূর্ণগ্রাস বেশ কয়েক মিনিট সময় নেয়। সূর্য পুরোপুরি ঢেকে গেলে কয়েক মিনিটের জন্য অন্ধকার থাকে। এ ধরনের বিরল আরেকটি ঘটনা দেখতে মানবজাতিকে অপেক্ষা করতে হবে ২০৪৪ সাল পর্যন্ত।
এই সূর্যগ্রহণ দেখতে দেশটির নায়াগ্রা জলপ্রপাতের কাজে জড়ো হতে পারেন অন্তত ১০ লাখ দর্শনার্থী। যদিও সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। বিরল এই সূর্যগ্রহণ সবচেয়ে ভালো দেখা যাবে মেক্সিকোর মাজাটলান, টরিওন, টেক্সসাসের সান অ্যানটোনিও, অস্টিন, অকো, ফর্ট ওর্থ এবং ডালাস, আরকানসাসের লিটল রকি, মিসৌরির এটি লুইস, কেন্টাকির লুইসভিলে, ইন্ডিয়ানার ইন্ডিয়ানাপোলিস, কলম্বাবাসের ডেটন, ওহিও’র টোলেডো এবং কেলিল্যান্ড, মিশিগানের ডেট্রয়েট, পেনসিলভানিয়ার ইরি, নিউ ইয়র্কের বাফেলো, রোসেস্টার এবং সিরাকাস এবং কানাডার হেমিলটন, টরেন্টো ও মন্ট্রিয়াল থেকে।
তবে বিরল সূর্যগ্রহণ দেখা নিয়ে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। পূর্ণ এই সূর্যগ্রহণ খালি চোখে দেখতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এক্ষেত্রে চোখের ক্ষতি হতে পারে। এজন্য বিশেষ ধরনের গ্লাস দিয়ে এটি দেখার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে সাধারণ কোনো সানগ্লাস এ ক্ষেত্রে নিরাপদ হবে না, বিশেষভাবে তৈরি সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের সূর্যগ্রহণ খবুই বিরল। পূর্ণ সূর্যগ্রহণের তারিখে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের মতো আকাশ অন্ধকার হয়ে যাবে। মূলত, সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে চাঁদ এলে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হয়। নির্দিষ্ট সময় সূর্যকে সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ করে ফেলে এটি। এতে সম্পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হয়। ফলে আকাশ হালকা অন্ধকার হয়ে যায়। সেসময়কে ভোর বা সন্ধ্যার মতো মনে হয়।
বছরের প্রথম সূর্যগ্রহণের ফলে সমগ্র উত্তর আমেরিকা জুড়ে, সমগ্রতার পথ, অর্থাৎ চাঁদ সূর্যের সামনে এসে মাটিতে তৈরি ছায়া, ১৮৫ কিলোমিটার প্রশস্ত হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো-র বিস্তৃত অংশে প্রায় ১০০ মিনিট ধরে চলবে এই সূর্যগ্রহণ।
এই অন্ধকার পথে দুটি এলাকা থাকবে, দিন রাত হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হবে। অন্ধকার হয়ে যাবে। তাপমাত্রা কমে যাবে। নিশাচর প্রাণী অর্থাৎ যেসব প্রাণী রাতে সক্রিয় থাকে তারা সক্রিয় হয়ে উঠবে। কিছুক্ষণ পর আবার সূর্য বেরিয়ে আসলে প্রাণীরা বিভ্রান্ত হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, গত সাত বছরে দ্বিতীয়বার এই পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ ঘটছে। পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ বলতে সেই বিশেষ মুহূর্তকে বোঝায়, যেখানে চাঁদ কার্যতই ঢেকে দেয় সূর্যকে। এমনিতে আকারে চাঁদের চেয়ে ৪০০ গুণ বড় সূর্য। কিন্তু পৃথিবী থেকে চাঁদের যত দূরত্ব, তার চেয়ে সূর্যের দূরত্ব ঢের বেশি। তাই চাঁদ যখন পৃথিবী এবং সূর্যের মাঝে অবস্থান করে, সূর্য কার্যত ঢেকে যায়। শুধু বলয়াকারে তার বাইরের আলোকমণ্ডলের পাতলা স্তরই চোখে পড়ে পৃথিবী থেকে, যা দেখে মনে হয়, চাঁদকে ঘিরে যেন ঠিকরে পড়ছে আলো। পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় পৃথিবীর উপর যে রেখা বরাবর চাঁদের ছায়া পড়ে, তাকে বলা হয় পূর্ণগ্রাসের পথ। ওই রেখা থেকেই পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের গোটা প্রক্রিয়া চাক্ষুষ করা সম্ভব হয়।
মার্কিন মহাকাষ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্যানুসারে, প্রায় ৩৭৫ দিন পর পর পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে সময়টা আরও বেশি হতে পারে। ১৯৭০ সালে এমন সূর্যগ্রহণ দেখা গিয়েছিল উত্তর আমেরিকা থেকে। আজকের পর ২০৭৮ সালে এ ঘটনার সাক্ষী হবেন আমেরিকানরা।