পুরান ঢাকায় হালখাতা উৎসব ঘিরে সাজ সাজ রব

আর মাত্র ৭দিন পরেই পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে সারা দেশেই ব্যবসায়ীরা হালখাতা উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিশেষ করে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে এ নিয়ে চলছে সাজ সাজ রব। ঐতিহ্যবাহী হালখাতা উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

আগের মতো হালখাতা উৎসবের জৌলুস এখন নেই বললেই চলে। তবে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা ঐতিহ্য হিসেবেই তা পালন করছেন। পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার ও শাঁখারীবাজারের স্বর্ণের দোকান, শ্যামবাজারের আড়ত এবং ইসলামপুরের কাপড়ের দোকানগুলোতে হালখাতার আয়োজনটা বেশ ভালো হয়।

চৈত্র মাসের শুরু থেকেই ব্যবসায়ীরা তাদের নিয়মিত ক্রেতাদের নিমন্ত্রণ জানানোর কাজ শুরু করেন। এ জন্য নিমন্ত্রণপত্রও ছাপানো হয়। তিন দিন ধরে চলে ধোয়া মোছার কাজ। সাধারণত সনাতন পঞ্জিকার তারিখ অনুযায়ী পয়লা বৈশাখের দিন হালখাতা করা হয়।

স্বাধীনতার আগে থেকেই পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারে ব্যবসা করে আসছেন পঙ্কজ কর্মকার। তিনি বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ‘বকেয়া রয়েছে এমন ক্রেতাদের কাছে ইতোমধ্যে হালখাতার নিমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। বৈশাখের শুরুর দিন ভোরে দোকানপাট ধুইয়ে, সোনা-রূপার পানি ও গোলাপ জল ছিটানো হয়।’

হালখাতা বা নতুন হিসাবের খাতা ব্যবসায়ীদের শুভ মহরত। প্রায় অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই ক্রেতাদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে হালখাতার রেওয়াজ।

কোনো কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ফাইলের প্রচলন হয়েছে। কম্পিউটারাইজডও হয়েছে কোনো প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ী হালখাতা হিসেবে বেছে নেন ঐতিহ্যবাহী লালসালু কাপড়ে বাঁধাই করা টালি খাতা।

সম্প্রতি পুরান ঢাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মহল্লা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসা কেন্দ্রে চলছে ধোয়া মোছার কাজ। কাগজ, বোর্ড, রং তুলিসহ বিভিন্ন ভাবে সাজানো হচ্ছে। তাঁতীবাজারের স্বর্ণের দোকানগুলোর সাজসজ্জা একটু আলাদা। এরই মধ্যে দোকান ও গদিঘর ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে।

শ্যামবাজারে গিয়ে জানা গেছে, সাধারণ আড়তদাররা পহেলা বৈশাখের দিন হালখাতা করলেও আদা, পেঁয়াজ ও রসুন আড়তদাররা জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে হালখাতা করবেন।

এদিকে পাইকারি পান দোকানদাররা চৈত্র সংক্রান্তিতে তা পালন করবেন। পান দোকানদার আসাদ বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ‘হালখাতার দিন আমরা মিলনমেলা জমাবো। আমাদের এখানে পান ব্যবসা জনপ্রিয়।’

ইসলামপুরের পাইকারি কাপড়ের ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মো. মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তাক বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ‘পহেলা বৈশাখের দিন আমরা হালখাতা উপলক্ষে সকাল ৮টায় দোকান খুলি। আগরবাতি জ্বালাই, গোলাপপানি ছিটাই।

তিনি আরও বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টায় মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করি। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিদের টাঙ্গাইলের চমচম ও নিমকি দিয়ে আপ্যায়ন করি। বছরের সব দেনা-পাওনার হিসাব নিষ্পত্তি করে পুরনো জঞ্জাল সরিয়ে নতুনভাবে বছর শুরু করি।’

তাঁতীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিপুল ঘোষ শঙ্কর বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ‘বিদায়ী বছরের হিসাব-নিকাশ চলছে জোরেশোরে। বিদায়ী বছরের লাভ-লোকসানের হিসাব শেষ করে পয়লা বৈশাখের দিনে নতুন হালখাতা খোলা হবে।

ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা বলেন, এখন আগের মতো ঘটা করে হালখাতা পালন করা হয় না। তবে পহেলা বৈশাখের আগে দোকানগুলো ধোয়ামোছা এবং পয়লা বৈশাখের দিনে মিষ্টি খাওয়া ও নতুন হিসাবের খাতা খোলার রেওয়াজ এখনও চালু আছে।

উল্লেখ্য, ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামল থেকে নতুন বছরের শুরুতে হালখাতার ব্যবহার শুরু হয়। পুরনো হিসাব বন্ধ করে নতুন হিসাব খোলা হয় যে খাতায়, তাই হালখাতা নামে পরিচিত।

 

টাইমস/টিআর/জেডটি/এইচইউ

Share this news on: