কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, সোয়া লাখ মানুষ পানিবন্দি

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সোয়া লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। শত শত ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এতে বন্যাদুর্গতরা উঁচু স্থানে ও ফ্লাড সেন্টারে অবস্থান নিয়েছেন। এ দিকে বন্যা আক্রান্ত হওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ মাদরাসার পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
 
শুক্রবার (৫ জুলাই) ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ভোরে নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭২, চিলমারী পয়েন্টে ৭৮ ও হাতিয়া পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এ নদের প্রবাহ অববাহিকার ৬টি উপজেলার সোয়া লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি কয়েক হাজার ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যার কারণে ৩৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসার পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ২ হাজার ৩শ’ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত রয়েছে। বানভাসিদের সহায়তায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ৮৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন থেকে ৫শ’ টন চাল ও ২০ লাখ টাকা বিতরণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাতিয়া পয়েন্টে ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ধরলা নদীর পানি ৪ সেন্টমিটার কমে ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমা চিলমারী নৌবন্দর পয়েন্টে ৭১ সেন্টমিটার এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধির ফলে বিপাকে পরেছে বানভাসি মানুষ। তারা ছুটছে আশ্রয়ের খোঁজে। বেশিরভাগ বানভাসি মানুষ নৌকার মধ্যে রাত্রিযাপন করছে। সরকারি প্রশাসন থেকে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ালেও এখনও সবার কাছে পৌঁছেনি সরকারি সহায়তা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত পাঁচ দিন ধরে নদনদীগুলোতে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধির ফলে গরু-ছাগল, সহায়-সম্পদ ও সন্তানদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করায় যাদের নৌকা আছে তারা নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে। যাদের নৌকা নেই তারা ঘরের ভেতর মাচা ও চৌকি উঁচু করে সেখানেই আশ্রয় নিয়েছেন। রান্নাবান্না করে সেখানেই থাকছেন। আশেপাশে যত উঁচু বাড়ি ও ফ্লাড শেল্টার রয়েছে, সেখানে আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন বানভাসি মানুষ।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা গ্রামের হামিদা জানান, বাড়িঘরে পানি ওঠায় বাচ্চাদের নিয়ে খুব বিপদে আছি। অনেক কষ্টে চৌকির উপরে রান্না করছি। আনাজ তরকারি ডুবে যাওয়ায় বেশি কিছু রাঁধতে পারছি না। একই গ্রামের হামিদুল জানান, বন্যায় গরুবাছুর নিয়ে খুব বিপদে আছি। পানিতে রইছে গরু। ঠিকমতো খাবার দিতে পারছি না।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের কালির আলগা গ্রামের হাসনা বেগম বলেন, ‘পুরো ঘরের ভেতর পানি। থাকতে না পেরে ছোট নৌকায় আশ্রয় নিয়েছি। কিছু রান্নাও করতে পারছি না। ছেলেমেয়ে নিয়ে আমরা খুব বিপদে আছি।’

বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার, কচাকাটা, নারায়নপুর, বেরুবাড়ী, বামনডাঙ্গা, নুনখাওয়া, সদর উপজেলার যাত্রাপুর, ঘোগাদহ, পাঁচগাছী, মোগলবাসা, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া, বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা, চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ, চিলমারী সদর, রমনা, অস্টমীরচর, রৌমারী উপজেলার বন্দবের, চর শৌলমারী, দাঁতভাঙ্গা, যাদুরচর এবং চর রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি, মোহনগঞ্জ ও চর রাজিবপুর ইউনিয়নে বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

কুড়িগ্রাম খামারবাড়ীর উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘চলমান বন্যায় ২ হাজার ৩শ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। বিশেষ করে পাট, রোপা আমন বীজতলা, আউশ ধান, শাক সবজি, তিল, তিসি, চিনা, কাউন ফসল তলিয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ বলেন, ‘বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বন্যা আক্রান্ত মানুষের মাঝে শুকনো খাবারসহ চাল, ডাল, তেলসহ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা চলমান রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বানভাসিদের নৌকা, স্পিডবোট নিয়ে আসা হচ্ছে। একাধিক টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

Share this news on:

সর্বশেষ

img
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৯২৫টি কচ্ছপ উদ্ধার Oct 01, 2025
img
২ দিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, বাড়তে পারে চারটি বিভাগের নদীর পানি Oct 01, 2025
img
থাকতে হলে সামাজিক অবদান রাখতে হবে যুক্তরাজ্যে Oct 01, 2025
img
আত্মসমর্পণ আমাদের স্বভাবে নেই : ইরানের প্রেসিডেন্ট Oct 01, 2025
img
অ্যাতলেটিকো ছেড়ে বার্সেলোনায় যাচ্ছেন আলভারেজ! Oct 01, 2025
img
‘হাতকড়া পরিহিত ছবি ব্যবহারে বিভ্রান্তিকর-অসত্য তথ্য প্রচার হচ্ছে’ Oct 01, 2025
img
বৃষ্টির মধ্যেই অনুশীলন করলেন জামাল-মিতুলরা Oct 01, 2025
img
বিশ্বের প্রভাবশালী ৬ আলেম আসছেন বাংলাদেশে Oct 01, 2025
img

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

বেনফিকার আত্মঘাতী গোলে জয় পেল চেলসি Oct 01, 2025
img
যেসব দেশে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা বন্ধ Oct 01, 2025
img
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সম্মত যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি Oct 01, 2025
img
'ভোলায় জামায়াতের ৪৫ নেতা-কর্মীর বিএনপিতে যোগদানের খবর মিথ্যা' Oct 01, 2025
img
রোহিঙ্গারা চলে যেতে চায়, উদ্যোগ গ্রহণ করুন: বিশ্ব নেতাদের ড. ইউনূস Oct 01, 2025
img
নির্বাচন হবে উৎসবমুখর পরিবেশে : ফারুক-ই-আজম Oct 01, 2025
img

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

লিভারপুলকে ১-০ গোলে হারাল তুরস্কের ক্লাব গালাতাসারাই Oct 01, 2025
img
আন্তর্জাতিক সংযোগ স্থাপনের জন্য বাংলাদেশকে ব্যবহার করার অনুমতি চায় স্টারলিংক Oct 01, 2025
img
জামায়াত আমির ড. শফিকুর রহমান হবেন বাংলাদেশের আগামীর প্রধানমন্ত্রী : ইয়াসিন খাঁন Oct 01, 2025
img
বিশ্ববাজারে ফের কমল স্বর্ণের দাম Oct 01, 2025
img
অবশেষে নেপালের বিপক্ষে জয় পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ Oct 01, 2025
img
প্রস্তাবিত নতুন ২ বিভাগে যেসব জেলা থাকছে Oct 01, 2025