এলিট ফোর্সকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসী তালিকাভুক্তি’, ইরানের পাল্টা জবাব

ইরানের ‘এলিট ফোর্স’ হিসেবে পরিচিত রেভ্যুলেশনারি গার্ডকে (আইআরজিসি) বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভৃক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কোনো দেশ অন্য দেশের সামরিক বাহিনীকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিল।

সোমবার হোয়াইট হাউসে এ বিষয়ে একটি বিবৃতিতে সাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অন্য একটি জাতির পুরো সেনাবাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা ভুক্ত করার এটা প্রথম পদক্ষেপ।

সোমবারের ওই বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের নেওয়া ওই নজিরবিহীন পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, রাষ্ট্র হিসেবে ইরান শুধু সন্ত্রাসীদের অর্থ সহায়তা দেয় না বরং তাদের বাহিনী আইআরজিসি সক্রিয়ভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, অর্থ সহায়তা ও ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। ট্রাম্প আরও বলেন, এই পদক্ষেপ ইরানের ওপরে চাপ প্রয়োগের পরিধি ও মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করবে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, যদি কেও ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করে তার মানে সে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থ জোগান দিচ্ছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর হবে।

অপর দিকে, এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওই পদক্ষেপের পাল্টা জবাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক’ দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে মার্কিন বাহিনী সেন্টকমকে (ইউনাইটেড স্টেটস সেন্ট্রাল কমান্ড) সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছে ইরান।

ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এসএনএসসি) জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেয়ায় এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এক বিবৃতিতে এসএনএসসির পক্ষ থেকে ওয়াশিংটনের এমন পদক্ষেপকে অবৈধ এবং নির্বোধ কর্মকাণ্ড বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক’ দেশ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে।

এসএনএসসি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্র দেশগুলো সব সময় পশ্চিম এশিয়ায় চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিকে মার্কিন বাহিনী সেন্টকমকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ।

২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৫ সালে তেহরানের সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসে। ওই চুক্তি বাতিলের বর্ষপূর্তির মাথায় এসে আবারও নতুন এই ইরানবিরোধী ঘোষণা দিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তবে মানবাধিকার খর্ব ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সমর্থনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র আগেও আইআরজিসি ও এর সঙ্গে সংযুক্ত সংস্থার অংশবিশেষের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা জুড়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর আরও একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সুযোগ পাবে। বিশেষ আইআরজিসি ইরানের অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় দেশটির ব্যবসা খাতকে দুর্বল করার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

আইআরজিসির কমান্ডার মোহাম্মদ আলী জাফারি ২০১৭ সালে এক সতর্ক বার্তায় বলেন, ট্রাম্প যদি এলিট ফোর্সের ব্যাপারে এ ধরনের ধারণা পোষণ করেন, তবে ‘আইআরজিসি দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে থাকা মার্কিন সেনাবাহিনীকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) হিসেবে বিবেচনা করবে।’

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: