যেভাবে সংগঠিত হচ্ছে হিযবুত তাহরীর

আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় গোপনে লিফলেট বিতরণ, দেয়ালে পোস্টারিংসহ সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি তাদের তৎপরতা নিয়ে বাংলাদেশ টাইমস-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

বাংলাদেশ টাইমস-এ প্রকাশিত সেই রিপোর্ট

জাতীয় নির্বাচনে সক্রিয় নিষিদ্ধ ‘হিযবুত তাহরীর’

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে র‌্যাব হিযবুত তাহরীরের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতারও করেছে। পরে তাদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসবাদ করা হয়। এ সময় তারা কীভাবে সংগঠিত হচ্ছে এমন কিছু তথ্যও র‌্যাবকে দিয়েছে।

র‌্যাব জানায়, শনিবার রাতে রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তারেক মোহাম্মদ ফয়সাল, তানভীর আহম্মেদ, মোস্তফা মোরসালীন প্রাঙ্গন, জামিনুর রেজা ওরফে নবীন ও মো. ফারাবী খান অনিক নামের পাঁচ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তারা সবাই হিযবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য বলেও জানায় র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে হিযবুত তাহরীরের বিভিন্ন ধরনের লিফলেট, ল্যাপটপ ও পেনড্রাইভে রক্ষিত হিযবুত তাহরীর সমন্ধীয় লেখা, মতবাদ ও বইয়ের সফট কপি উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব আরও জানায়, গ্রেফতার তারেক মোহাম্মদ ফয়সাল বরিশাল জেলার মুলাদী উপজোর পাতারচড় গ্রামের বাসিন্দা কাজী মোসলেহ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ঢাকার মিরপুরের পাইকপাড়া এলাকায় থাকতেন এবং কল্যাণপুরে একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করতেন। ২০১৩ সাল থেকে হিযবুত তাহরীর সঙ্গে জড়িত হন তিনি। গুগুলে সার্চ দিয়ে অনলাইনে হিযবুত তাহরীর বিষয়ে জেনে ধীরে ধীরে হিযবুত তাহরীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি হিযবুত তাহরীর মেন্টর পর্যায়ে একজন সক্রিয় সদস্য।

গ্রেফতার তানভীর আহম্মেদ গোপালগঞ্জ জেলার মুকশেদপুর উপজেলার দোয়ারী ডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল হক মিয়ার ছেলে। তিনিও রাজধানীর মিরপুর এলাকায় বাস করতেন এবং মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে মার্কেটিং (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। দুই মাস আগে একদিন আসরের নামাজের পর ৬০ ফুট এলাকায় প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন মুসল্লি একত্র হয়েছিল। সেখানে মধ্যবয়সী একজন (২৮ থেকে ৩০ বছর হবে) ইসলামী খেলাফত নিয়ে আলোচনা করছিল। আলোচনা শুনে হিযবুত তাহরীর সমর্থক হয়ে যান। বর্তমানে তিনি হিযবুত তাহরীর একজন কর্মী সংগ্রাহক এবং মিরপুর এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বলে জানায় র‌্যাব।

গ্রেফতার মোস্তফা মোরসালীন প্রাঙ্গন মিরপুরের উত্তর পীরেরবাগ এলাকার বাসিন্দা মো. সামসদ হোসেনের ছেলে এবং মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ফিন্যান্স (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনিও দুই থেকে তিন মাস আগে একদিন রাজধানীর ৬০ ফুট এলাকায় একটি মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়েন। পরে মসজিদের পাশে একটি চায়ের দোকানে বসে খিলাফত বিষয়ক আলোচনায় যোগ দেন। এরপর থেকে তিনিও সক্রিয়ভাবে সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

গ্রেফতার জামিনুর রেজা ওরফে নবীন ময়মনসিংহ জেলার হরগঞ্জ উপজেলার বাটাজোড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুল জলিল মন্ডলের ছেলে। তিনি তেজগাঁও কলেজে স্নাতক ফিন্যান্স (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ২০১৪ সালে এইচএসসি পাসের পর ৬০ ফুট এলাকায় ফরিদ ও সোহেল নামক দুই জনের সঙ্গে নবীনের পরিচয় হয়। তারা ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। এভাবে দিনে দিনে আলোচনার এক পর্যায়ে জানতে পারেন হিযবুত তাহরীর নামে একটি সংগঠন আছে এবং বিভিন্ন সময়ে আলোচিত বিষয়গুলি হিযবুত তাহরীর মতাদর্শেও আলোকপাত করে। এই মতাদর্শ তার ভালো লাগে এবং তিনি এই সংগঠনের কার্যক্রমে যুক্ত হয়।

গ্রেফতার মো. ফারাবী খান অনিক মিরপুরের উত্তর পীরেরবাগ এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল জলিলের ছেলে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সম্প্রতি কল্যানপুর মাঠে ক্রিকেট খেলার সময় তারেক, প্রাঙ্গন, তানভীর ও তারেকের কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। তারেক ও তার বন্ধু খিলাফত প্রতিষ্ঠার কথা বলতেন। এছাড়া পাবনা গলির মোড়ে চায়ের দোকানে আমতলায় বৈঠকে অনিককে নিয়ে যেতেন তারা। এক পর্যায়ে তিনিও হিযবুত তাহরীর প্রতি সমর্থন জানান।

এদিকে রোববার দুপুরে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় র‌্যাব-৪ এর কমান্ডিং অফিসার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির জানান, হিযবুত তাহরীরের সদস্যদের গ্রেফতারে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Share this news on: