গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নিতে জর্ডানের ওপর প্রভাব খাটাচ্ছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। চাপ দিচ্ছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহকে। কিন্তু ট্রাম্পের মিষ্টি কথায় মন গলেনি বাদশাহ আব্দুল্লাহর।
সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তার দেশ ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কিছুতেই সায় দেবে না। বরং ফিলিস্তিনিদের না সরিয়েই গাজাকে নতুন করে সাজানোর পরামর্শ দেন তিনি।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বৈঠক করেন ট্রাম্প এবং দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্রের গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়া ও উপত্যকার বাসিন্দাদের স্থায়ীভাবে সরানোর পরিকল্পনা আছে। তিনি এই সিদ্ধান্তে অটল থাকারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অবশ্য ট্রাম্পের এমন একপাক্ষিক সিদ্ধান্তে চটেছেন আরব নেতারা। ট্রাম্পের গাজা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রস্তাবে এরইমধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সৌদি, কাতার, মিসর, ইরান, তুর্কিয়েসহ আরব দেশগুলো। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সমর্থন দিয়ে নিজ নিজ দেশের পক্ষে অবস্থান তুলে ধরেন দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা।
ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিধব্বস্ত গাজাকে পুনর্গঠিত করতে ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে মিশর ও জর্ডানসহ বেশ কয়েকটি দেশে পুনবার্সিত করা হবে। বাস্তুচ্যুত ওই ফিলিস্তিনিরা সেসব দেশেই স্থায়ী হবে বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প। যেখান থেকে তারা আর কখনও গাজায় ফিরবে না।
জর্ডান বাদশাহর সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা গাজা নিতে যাচ্ছি। এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আমরা একে নতুন করে গড়ে তুলব। শেষ পর্যন্ত আমরা উপত্যকা পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। এটিকে গড়ে তোলা হবে মধ্যপ্রাচ্যের হাব হিসেবে, কর্মসংস্থান হবে লাখো মানুষের।’
তার এই পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে ‘শান্তি’ বয়ে আনবে বলেও মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের জবাবে বাদশাহ আবদুল্লাহ গাজা এবং তার দেশের সীমান্তবর্তী অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার বিরুদ্ধে জর্ডানের অটল অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষে সামাজিকমাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে বাদশাহ আব্দুল্লাহ জানান, ‘এ বিষয়ে গোটা আরব বিশ্ব একমত। আমরা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র চাই, চাই ফিলিস্তিনিদের অধিকার। তাদের স্থানচ্যুত না করে গাজা পুনর্নির্মাণ এবং ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করাই অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।’
জর্ডানের বাদশাহর আপত্তির পরও ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, জর্ডান এবং মিশর উভয়ই গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের আশ্রয় দিতে রাজি হবে। কারণ ওই দেশই অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তার জন্য ওয়াশিংটনের উপর নির্ভরশীল। ট্রাম্পের কথা না মানলে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও ইঙ্গিত দেন ট্রাম্প।
এর আগে গত সপ্তাহে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প গাজা দখল করে তা নতুন করে সাজানোর ঘোষণা দেন। এজন্য ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের অন্য দেশে স্থানান্তর করার কথাও বলেন ট্রাম্প। তার ঘোষণার পর জাতিগত নিধনের শঙ্কা জানায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা।