ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাব : চড়া স্বর্ণের বাজার

বেড়েই চলেছে স্বর্ণের দাম। ক্রমবর্ধমান হারে দাম বেড়ে নতুন রেকর্ড স্পর্শের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে সোনালী ধাতু। লাগামহীন এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ী ট্রাম্প- এমনটিই বলছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের নতুন শুল্কনীতির প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাজারের স্বর্ণের দামে।

ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় ঘিরে উত্থান-পতনের মুখে পড়েছে ডলার, ক্রিপ্টো কারেন্সি ও বিটকয়েনের মতো মুদ্রার বাজার। আর তাই এসব মূদ্রার চেয়ে বিনিয়োগের অধিক নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণকে বেছে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। অর্থনীতিবিদদের ধারণা, ডলার কেন্দ্রিক অর্থনীতির আধিপত্য হ্রাস পেলে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণই হবে একমাত্র বিকল্প।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মুদ্রার অস্থিরতা এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণকেই সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচনা করছেন। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্যানুযায়ী, স্বর্ণের দাম যেহেতু সরাসরি মুদ্রার মানের সঙ্গে ওঠানামা করে না, তাই ভবিষ্যতে চুক্তিভিত্তিক স্বর্ণ বা ফিউচার গোল্ডের দাম আরও বাড়তে পারে।সে হিসেবে স্বর্ণের আকাশচুম্বী দাম হতাশ করছে অর্থনীতিবিদদের। অন্যদিকে যাদের সংগ্রহে পর্যাপ্ত স্বর্ণ আছে তারা রেকর্ড দামকে দেখছেন আশার আলো হিসেবে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই একের পর এক বাণিজ্য শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে আসছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। কানাডা, মেক্সিকোর ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক দ্বন্দে জড়ান মিত্র দেশ দুটির সঙ্গে। শুল্ক জারি করেন চীনের পণ্যেও। পরবর্তীতে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে শুল্ক আরোপ স্থগিতের ঘোষণা দিলেও নতুন করে ফের স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। আগামী ৪ মার্চ থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

ট্রাম্পের ঘোষণার পর থেকেই বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। গেল ১০ ফেব্রুয়ারি প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড ২ হাজার ৯১১ ডলার স্পর্শ করে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আরও ৩১ ডলার বৃদ্ধি পেয়ে তা ২ হাজার ৯৪২ ডলারে পৌঁছায়। স্পট গোল্ড বা শেয়ারবাজার থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কেনা স্বর্ণের দামও ০ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৯১৬ ডলারে পৌঁছেছে।

২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন সংকটের সময় প্রথমবার প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১ হাজার ডলার ছাড়ায়। এরপর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে তা রেকর্ড ১ হাজার ৯০০ ডলারে পৌঁছায়। ২০২২ সালে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের সময় স্বর্ণের দাম বেড়ে প্রতি আউন্স ২ হাজার ৭০ ডলারে দাঁড়ায়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডলার কেন্দ্রিক অর্থনীতি থেকে বের হওয়ার প্রচেষ্টার পাশাপাশি ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে স্বর্ণের বাজারে এতো বড় উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

Share this news on: