রমজানে দিনের বেলা সব হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। সেই সঙ্গে সইব ধরনের ‘অশ্লীলতা’ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তবে জামায়াত আমিরের এমন বিবৃতিতে সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
ডা. শফিকুরের মন্তব্যের বিরোধিতা করে অনেকে বলেন, হোটেল-রেস্টুরেন্ট কেবল মুসলিমদের জন্য নয়। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও হোটেলে খাবার খান। শুধু তাই নয়, অসুস্থ রোগী কিংবা খেটে খাওয়া শ্রমিকরা সংসার চালাতে হিমশিম খান বলে রমজানেও কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য হন। অনেকের পক্ষেই রমজানে রোজা রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তারা স্বল্প মূল্যে ক্ষুধা নিবারণের জন্য হোটেল-রেস্টুরেন্টকে বেছে নেন বলেও মন্তব্য করেন অনেকে।
কাজেই রমজানে দিনের বেলা খাবারের দোকান গুলো বন্ধ রাখার এ আহ্বানকে একপাক্ষিক ও অমানবিক হিসেবে দেখছেন নেটিজেনরা। তাদের মতে, রমজান সংযমের মাস। খাবারের দোকান খোলা বা বন্ধ রাখায় কারও সংযম বাধাগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ নেই।
এদিকে, ২৮ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জাতি এমন এক সময় পবিত্র মাহে রমজান পালন করতে যাচ্ছে যখন দেশ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হয়েছে। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসা জালিমের হাত থেকে মুক্ত হয়ে দেশের জনগণ মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, পবিত্র মাহে রমজান রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে আমাদের সামনে সমাগত। এ মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে রয়েছে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর। বরকতময় মহিমান্বিত এ রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ মাস তাক্বওয়া, সহনশীলতা ও পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস।
দেশবাসীকে কোরআনের শিক্ষার আলোকে সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে পবিত্র রমজান মাসকে প্রশিক্ষণের মাস হিসেবে গ্রহণ করার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতের আমির। ফ্যাসিবাদের দোসর ও অসৎ ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ইফতার সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি করার সুযোগ যেন না পায় সেদিকে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘অসৎ ব্যবসায়ীদের সকল সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। সুষ্ঠু ও সুপরিকল্পিত বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। দরিদ্র লোকরা যেন পবিত্র মাহে রমজানের সিয়াম অনায়াসে পালন করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য ভর্তুকি দিয়ে হলেও চাল, ডাল, তেল, মাছ, গোশত, তরি-তরকারি, চিনি, খেঁজুর, ছোলা, মুড়ি ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য জনগণের ক্রয় সীমার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।’
দেশের নাগরিকরা ভোটাধিকারসহ সকল মৌলিক মানবাধিকার ফিরে পাবার প্রত্যাশায় আছে উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচারের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদের দোসরদের সকল চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে। শান্তি-স্বস্তির নতুন বাংলাদেশ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।’