কেন নাহিদকে অভ্যুত্থানের আইকন ধরা হচ্ছে?

নাহিদ ইসলামকেই কেন নেতা হিসেবে বেছে নিলো নতুন দল এনসিপি? যদিও বয়সের বিবেচনায় নাহিদ ইসলাম তার সমসাময়িকদের তুলনায় অনেকটাই তরুণ। তবুও দলনেতা হিসাবে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছেন তিনি। কিন্তু কেন? আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া প্রথম সারির নেতারা জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে "ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের আহ্বানটা নাহিদ ইসলাম দিয়েছিলেন। এক দফার ঘোষক তিনি। যে কারণে গণঅভ্যুত্থানের আইকন বলা যায় তাকে। আর এই মূল কারণেই তাকে নির্দ্বিধায় সবাই মেনে নিচ্ছেন।

আর গণঅভ্যুত্থানের পরে যেহেতু ওই চেতনাকেই ধারণ করে দল গঠিত হচ্ছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই নাহিদ ইসলাম এখানে প্রধান চরিত্র হয়ে উঠেছেন।

২৬ বছর বয়সী নাহিদ ইসলামের জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং পড়াশোনা— পুরোটাই ঢাকায়।

২০১৪ সালে ঢাকার দক্ষিণ বনশ্রী মডেল হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। এরপর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতক শেষ করেন ২০২২ সালে।

এরপর তিনি একই বিভাগে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন। তার বিভাগের একজন শিক্ষক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, নাহিদ ইসলাম এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিভিন্ন ইস্যুতে তাকে আন্দোলনে দেখা গেছে।

তার শিক্ষক ও সহপাঠীরা জানিয়েছেন, তিনি বিভিন্ন পাঠচক্রের সাথেও যুক্ত ছিলেন।

সবার আলোচনায় যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা হলো– নাহিদ ইসলামের রাজনৈতিক সক্রিয়তা দৃশ্যমান হয়েছে মূলত ২০১৮ সালের কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণের পর থেকে। যদিও তখন তিনি নেতৃত্বে ছিলেন না।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সেসময় পুলিশ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দু'জনকে তুলে নিলে মি. ইসলাম তার প্রতিবাদ করেন। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকদের বাধার মুখে পড়তে হয়েছিলো তাকে।

এরপর, ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সেসময় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ তথা নুরুল-রাশেদ-ফারুক প্যানেল থেকে তিনি সংস্কৃতি সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন। যদিও সেই নির্বাচনে তিনি জয়ী হননি।

পরবর্তীতে মতবিরোধের কারণে ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে বেরিয়ে আসেন এবং ২০২৩ সালের চৌঠা অক্টোবর আত্মপ্রকাশ করা নির্দলীয় ছাত্র সংগঠন 'গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি'র কেন্দ্রীয় নেতা হিসাবে যোগ দেন।

এর ঠিক পরের বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন'- এর এক নম্বর সমন্বয়ক হিসাবে তিনি আবার আলোচনায় আসেন।

শুরুতে এই আন্দোলন ছিল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন। পরবর্তীতে তা বিভিন্ন বাঁক বদল করে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। শিক্ষার্থী-জনতার সম্মিলনে টানা ৩৬ দিনের রক্তক্ষয়ী ওই আন্দোলনের এক পর্যায়ে তৎকালীন আওয়ামী সরকারের পতন হয়।

গত বছরের অগাস্টের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার থেকে শেখ হাসিনা ও তৎকালীন সরকারের পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা দেন এই নাহিদ ইসলাম।

সেই ঘোষণার একদিন পর, পাঁচই অগাস্ট দুপুরে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর আসে। 

গত আটই অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন নাহিদ ইসলাম।

পরদিন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান। এবং, ১৬ই অগাস্ট তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পান।

কিন্তু নতুন রাজনৈতিক দলে যোগদানের লক্ষ্যে তিনি ছয় মাসের মাথায়, চলতি বছরের ২৫শে ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন।

সাংগঠনিক দক্ষতা, রাজনৈতিক বোঝাপড়া ও জনগণের সাথে ডিলিং- নাহিদ ইসলামের মাঝে "আন্দোলনের প্রথম থেকেই ওই তিনটি জিনিসের যথাযথ মেলবন্ধন আছে বলেই তাকে সবাই মূল নেতৃত্বে মেনে নিয়েছেন।

Share this news on: