শিক্ষকদের বেত ব্যবহারে কেরালা হাইকোর্টের অনুমতি

শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেত বহনের অনুমতি দেওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে ভারতের দক্ষিণের কেরালা রাজ্যের হাইকোর্ট। আদালত জানিয়েছে, শিক্ষকের হাতে বেত থাকলে সেটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলবে এবং তাদের সামাজিক অপরাধ থেকে দূরে রাখবে।

একই সঙ্গে আদালত রায়ে স্পষ্ট করেছে, এটি ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক নয়, বরং এটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

শনিবার (১৫ মার্চ) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই রায়ের তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের অভিযোগ উঠলে পুলিশকে প্রথমে একটি প্রাথমিক তদন্ত করতে হবে। সেই তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা নেওয়া বা তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।

সম্প্রতি কেরালার এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা থানায় অভিযোগ করলে মামলাটি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। ওই মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষকের আগাম জামিন মঞ্জুর করে আদালত বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শিক্ষকদের ছোটখাটো শাস্তি দেওয়ার অধিকার থাকা উচিত।

বিচারপতি পিভি কুন্নিকৃষ্ণন মামলাটি শুনানির সময় বর্তমান প্রেক্ষাপটের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। তারা শিক্ষকদের হুমকি দিচ্ছে, শারীরিক আক্রমণ করছে এবং অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ঘেরাও করছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অস্ত্র, মাদক ও মদ নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক।
তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষক যদি বেত সঙ্গে রাখেন, তাহলে সেটি ব্যবহারের জন্য নয়, বরং এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্রতীকী সতর্কতা হয়ে থাকবে। এটি তাদের মনে করবে যে শিক্ষক আছেন, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।

কেরালা হাইকোর্টের মতে, শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা জরুরি। বিচারপতি কুন্নিকৃষ্ণন বলেন, শিক্ষকরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের গাইড। তাদের মনোবল ভেঙে দেওয়া উচিত নয়। শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা ও আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য শিক্ষকদের কিছু স্বাধীনতা দেওয়া প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অহেতুক অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করার প্রবণতা বাড়ছে। কিছু শিক্ষার্থী বা অভিভাবক অভিযোগ করেন যে শিক্ষক চিমটি কেটেছেন, রাগী চোখে তাকিয়েছেন বা সামান্য শাস্তি দিয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে পুলিশকে অবশ্যই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে হবে এবং সরাসরি মামলা নেওয়া উচিত নয়।
উল্লেখ্য, কেরালা হাইকোর্টের এই রায় শিক্ষাক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। আদালত শিক্ষকদের হাতে বেত রাখার অনুমতি দিয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলা রক্ষা করে এবং শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে।

তবে, এটি শুধু একটি প্রতীকী ব্যবস্থা, যা শিক্ষার্থীদের মনে নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব তুলে ধরবে। আদালতের এই রায় শিক্ষাক্ষেত্রে কীভাবে প্রভাব ফেলবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।

এফপি

Share this news on: